সংস্কার ছাড়া পথ নেই

রাজস্ব ঘাটতি
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাজস্ব ঘাটতির যে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে, তা এখন আর শুধু অভ্যন্তরীণ উদ্বেগের বিষয় নয়- আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ব্যবসা-বাণিজ্যে চলমান মন্দা এবং বিনিয়োগে স্থবিরতা রাজস্ব সংগ্রহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছে। অথচ বাস্তবতা হলো, করোনাকালের স্থবিরতা থেকে বেরিয়ে আসার পরও বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়েনি, বরং তা কমে বর্তমানে ৬.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এক দশক আগের দুই অঙ্কের অনুপাতের তুলনায় এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। আইএমএফের শর্ত পূরণের বদলে এই অনুপাতের নি¤œগামিতা সংস্থাটির অসন্তোষ আরো বাড়াচ্ছে, যা আসন্ন অক্টোবরের ঢাকা সফরে এনবিআরকে কঠিন জবাবদিহির মুখে ফেলতে পারে। এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তারা যদিও বলছেন যে আইএমএফের সব শর্তের সঙ্গে তাঁরা একমত নন এবং শিল্পকে এগিয়ে নিতে বাস্তবসম্মত কৌশল গ্রহণ করবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঋণের কিস্তি ছাড়ের জন্য তাঁদের একটি কার্যকর রোডম্যাপ তুলে ধরতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিনিয়োগে ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহ এবং গণ-অভ্যুত্থানের পর অর্থনীতির গতি ফিরে না আসাকে রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতার কারণ হিসেবে তুলে ধরা হলেও এই ব্যাখ্যা আইএমএফের কঠোর শর্তের সামনে যথেষ্ট নয়। এনবিআরের সামনে এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো শুধু কারণ ব্যাখ্যা করা নয়, বরং আগামীর কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা। গবেষক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক যেমনটি বলেছেন, ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিত করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দীর্ঘমেয়াদি কৌশল দিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পথ দেখানো। এনবিআরের নেওয়া উদ্যোগগুলো; যেমন- ব্যবসা সহজীকরণ, আদায় ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স, মামলাজট কমানো নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এমনকি আইএমএফের পরামর্শে এনবিআরকে ভেঙে দুটি বিভাগ করার কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু এই সংস্কারগুলোর দ্রুত দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে না পারলে ২০২৬ সাল পর্যন্ত অনুমোদিত ৩৮টি শর্তের ভারে ঋণের কিস্তি ছাড় পিছিয়ে যেতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের জন্য আইএমএফের ঋণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এনবিআরকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একটি বিশ্বাসযোগ্য মধ্যমেয়াদি কৌশল নিয়ে প্রস্তুত হতে হবে। সেই কৌশলে থাকতে হবে করের আওতা বাড়ানো, ফাঁকি রোধ করা এবং কর প্রশাসনকে আরো আধুনিক ও দক্ষ করে তোলার সুস্পষ্ট রূপরেখা।