গতির নেশায় মৃত্যুর হাতছানি

দুর্ঘটনার কারণ মোটরসাইকেল
সড়কে মোটরসাইকেল এখন আর শুধু যাতায়াতের বাহন নয়, হয়ে উঠেছে মৃত্যুর এক বড় কারণ। রাজধানীসহ সারা দেশে দুই চাকার এই যান ভয়াবহ হারে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১,৮৩৯ জন। গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই তরুণ। গত দেড় দশকে দেশে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন বেড়েছে ছয় গুণ, আর সেই অনুপাতে বেড়েছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুও। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৫.৬৭ শতাংশই বাইক আরোহী- যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। অধ্যাপক ড. সামছুল হক জানান, পশ্চিমা দেশগুলোর গবেষণায় দেখা গেছে, দুই চাকার বাহন চার চাকার গাড়ির তুলনায় ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের দেশের বিশৃঙ্খল সড়কে এই ঝুঁকি আরও ভয়াবহ। তরুণদের মধ্যে মোটরসাইকেলের প্রতি এক ধরনের ‘মাদকতা’ কাজ করে, যা তাদের প্রতিযোগিতার মনোভাব ও বেপরোয়া গতিতে চালনার দিকে ঠেলে দেয়। দুর্ঘটনার অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত গতি, হেলমেট না পরা, মোবাইল ফোন ব্যবহারের মতো মনোযোগের অভাব, এবং প্রশিক্ষণের ঘাটতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ঘটনা কমাতে প্রথমত গণপরিবহনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং ছোট যানবাহনের চলাচল নিরুৎসাহিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সিসি বৃদ্ধির অনুমোদন ও রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পরিহার করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিল্প মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাইকশিল্পকে ‘বিনিয়োগ’ ও ‘কর্মসংস্থান’ হিসেবে দেখছে, জননিরাপত্তার বিষয়টি নয়। আইন প্রয়োগে কঠোরতা আনতে হবে এবং চালকদের বৈধ লাইসেন্স নিশ্চিত করতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতে বাইক তুলে দেওয়া বন্ধ করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহারে মৃত্যুর ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও নজরদারি বাড়াতে হবে। যারা আইন ভঙ্গ করবে, তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা শুধু বাড়তেই থাকবে।