সম্পাদকীয়

মানুষের ভোগান্তি কমাতে পদক্ষেপ নিন

মূল্যস্ফীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে

বাংলাদেশ বর্তমানে এক কঠিন অর্থনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি। সরকার চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.৩৬ শতাংশে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারতে ২.৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১.৫ শতাংশ, নেপালে ১.৬৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫.৬ শতাংশ। এই চিত্র আমাদের নীতিগত দুর্বলতা ও বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যে পণ্য ১০০ টাকায় কেনা যেত, এখন তা কিনতে লাগছে ১০৮ টাকা ৩৬ পয়সা। চাল, ডাল, ডিম, পেঁয়াজ, মুরগির মতো নিত্যপণ্যের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নি¤œ ও মধ্যবিত্তের জন্য সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিবিদরা মূল্যস্ফীতিকে ‘অদৃশ্য কর’ হিসেবে দেখেন। আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে ঋণ নিতে হচ্ছে বা মৌলিক চাহিদা- খাদ্য, চিকিৎসা, যাতায়াত—কাটছাঁট করতে হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ৮.৪৭ শতাংশ, শহরে ৮.২৮ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৭.৬৪ শতাংশ, যা সংকটকে আরও প্রকট করে তুলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করলেও বাজারে তার কার্যকর প্রভাব নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে জ্বালানি তেলের দাম, আমদানি নির্ভরতা, দুর্বল বাজার তদারকি ও সরবরাহ ব্যবস্থার অদক্ষতা। চালের বাজারে যে দাম ভোক্তারা দিচ্ছেন, তা সরকারি পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হচ্ছে না। খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজন কঠোর ও সুসমন্বিত পদক্ষেপ। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো কার্যকর বাজার তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলে পাইকারি পর্যায়ে মনোপলি ভাঙতে হবে। কৃষিপণ্যের সরাসরি বিপণন চ্যানেল শক্তিশালী করা, খাদ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো এবং কঠোর মুদ্রানীতির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। সাধারণ মানুষের পকেটে স্বস্তি ফেরাতে ক্রয়ক্ষমতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতি শুধু অর্থনৈতিক সূচক নয়, এটি সামাজিক সংকটে পরিণত হয়। বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ফিরিয়ে আনতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ শুধু আর্থিক নীতি নয়, এটি রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক দক্ষতারও পরীক্ষা। সরকার যদি বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে কার্যকর তদারকি, কৃষি উৎপাদন সম্প্রসারণ ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে নজর দেয়, তবে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে পারে। অন্যথায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দীর্ঘায়িত হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button