পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগান

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে বহু পরিব্রাজক এবং ভ্রমণকারী মুগ্ধ হয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবে সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন-সম্ভাবনা অপরিসীম। আমাদের রয়েছে সুবিশাল সমুদ্রসৈকত, পাহাড়, অরণ্যঘেরা জলপ্রপাত, প্রতœতত্ত্বের প্রাচুর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শনসহ নানা ধরণের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত স্থান, যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের দেশকে পরিণত করেছে একটি বহুমাত্রিক আকর্ষণ সমৃদ্ধ অনন্য পর্যটন গন্তব্যে, যা বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছে পর্যটকদের জন্য তীর্থস্থান হিসেবে। বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প বিকাশের অবারিত সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। আধুনিক বিশে^ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার পর্যটন। পর্যটনশিল্প কেবল বিদেশি মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রই নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতি চাঙা করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং গ্রামীণ উন্নয়নের এক বড়ো মাধ্যম। এ শিল্পের প্রসার হলে হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, হস্তশিল্প ও স্থানীয় পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে, যা সরাসরি লাখো মানুষের জীবিকা গড়ে তুলবে। তা ছাড়া পর্যটনের মাধ্যমে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বিশে^ ছড়িয়ে পড়বে, যা বিনিয়োগ আকর্ষণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নেও সহায়ক হবে। আমাদের দেশে বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, পাহাড়পুরের প্রাচীন বৌদ্ধবিহার, ষাটগম্বুজ মসজিদের অনন্য স্থাপত্য, মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সিলেটের চা বাগান সবই পর্যটনের জন্য অসামান্য সম্পদ। বিশ^ ঐতিহ্য সুন্দরবন ঘিরে বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পের বিকাশে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এই বনের সৌন্দর্য দেখতে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। তবে বন ঘিরে মানুষের যত আগ্রহ, কিছু অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতার কারণে সেটা মেটাতে পারছেন না পর্যটকরা। পর্যটনের ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনা থাকলেও দীর্ঘদিনেও পর্যটকদের জন্য বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা, রাতে অবস্থান, বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনো নিশ্চিত হয়নি। সুন্দরবনের সড়কপথে চলাচলের তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। বনের ভেতর ঘুরে দেখার জন্য ওয়াকওয়ের অবস্থা তেমন ভালো না। এসব কারণেই ঠিক ওভাবে পর্যটক টানতে পারছে না সুন্দরবন। এগুলোর বিষয়ে উদ্যোগ নিলে পর্যটকদের কাছে সুন্দরবন ভ্রমণ আরো আনন্দের হবে। এখানে পর্যটনশিল্পের বিকাশ হলে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি ও এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দীর্ঘসূত্রিতা ও অবহেলার কারণে এই খাত দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থেকেছে। সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি জাতীয় অর্থনীতির প্রধান আয় উৎসে পরিণত হতে পারে। পর্যটন আমাদের শুধু বৈদেশিক মুদ্রা ও কর্মসংস্থানই দেবে না, বরং দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। একবিংশ শতাব্দীতে উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য পর্যটনশিল্প হতে পারে সবচেয়ে বড়ো শক্তি।