সম্পাদকীয়

নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই পদক্ষেপ জরুরি

ভয়াবহ হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি

বর্তমানে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার ভয়াবহতা শুধু স্বাস্থ্য সংকট নয়, এক গভীর জাতীয় দুর্যোগে রূপ নিয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শুধু চিকিৎসা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়—প্রয়োজন সমন্বিত, সুপরিকল্পিত ও কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার বিস্তার রোধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। অথচ মশা নিধনে ব্যয় হয়েছে বিপুল অর্থ- গত ১৩ বছরে দুই সিটি করপোরেশন খরচ করেছে ১,৩৫৪ কোটি টাকা। এত ব্যয়ের পরও কার্যকর ফল না পাওয়া উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু নগর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ ছিল সীমিত ও সমন্বয়হীন। জবাবদিহির অভাব ও সমন্বয়হীনতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। ড্রেন, ডোবা, নর্দমা ও খালে পানির প্রবাহ না থাকা, যত্রতত্র আবর্জনা জমে থাকা, নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমে থাকা—সব মিলিয়ে এডিস মশার প্রজননের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। নাগরিক অসচেতনতা যেমন প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমে থাকা, এসবও ডেঙ্গুর বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। অনেকেই জানেন না, এডিস মশা দিনের বেলায় কামড়ায় এবং পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। ফলে বাড়ির ছাদ, বারান্দা, ফুলের টব, এমনকি ফ্রিজের ট্রে পর্যন্ত হয়ে উঠছে মশার আবাসস্থল। এই সংকট মোকাবেলায় নাগরিকদের সচেতনতার পাশাপাশি দরকার স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয়তা। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, জরুরি ভিত্তিতে মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করা এখন সময়ের দাবি। শুধু ওষুধ ছিটিয়ে দায়িত্ব শেষ করলে হবে না—প্রয়োজন এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করা হবে। স্কুল-কলেজ, অফিস, বাজার, বাসাবাড়ি- সব জায়গায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে হবে পর্যাপ্ত শয্যা, ওষুধ, চিকিৎসক ও নার্সসহ। অনেক হাসপাতালে এখনো ডেঙ্গু পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, যা রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব ঘটায়। সরকারকে অবশ্যই স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বাড়াতে হবে এবং জরুরি ভিত্তিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে একক প্রচেষ্টা নয়, দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ- সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, গণমাধ্যম ও জনগণের সমন্বয়ে। এখনই সময়, নয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে এবং এর ভয়াবহতা দীর্ঘস্থায়ী হবে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ হতে হবে সময়োপযোগী, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং জনসম্পৃক্ত। অন্যথায়, এই রোগ শুধু স্বাস্থ্য নয়, অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপরও ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button