সম্পাদকীয়

উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা: কঠোর হতে হবে

দেশে নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতন ও ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি এর মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্রই এর ভয়াবহ শিকার হচ্ছেন কন্যাশিশুসহ সকল বয়সী নারী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব ঘটনা সমাজের কাছে এক কঠিন সতর্কবার্তা। ‘‘এই ধরনের প্রবণতা শুধু শিশু ক্ষেত্রে শারীরিক ক্ষতিই করছে না, বরং তাদের মানসিক বিকাশকেও মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে’’ বলে মন্তব্য করেন তারা। কিছু জায়গায় শিশুদের যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্কুলগুলোতে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নৃশংসতার মাত্রা ও সংখ্যা বিবেচনায় সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতায় দেশবাসী আতংকগ্রস্থ সময় অতিবাহিত করছে। এ পরিস্থিতি অগ্রহণযোগ্য। নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতন ও ধর্ষণ, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পাওয়া, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা প্রভৃতি কারণে সামাজিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে যা সমতাভিত্তিক বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার অন্তরায়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। সংস্থাটির প্রতিবেদনে এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৭২৫ জন ছেলে ও মেয়ে শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে- যার মধ্যে শূন্য থেকে ছয় বছর বয়সী শিশু রয়েছে ১০২ জন। ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু রয়েছে ২১৭ জন। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু রয়েছে ২০৮ জন। বয়স জানা যায়নি এমন শিশু রয়েছে আরও ১৯৮ জন। এদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৫টি শিশু, মামলা হয়েছে ২৭টি। ১৩৪টি শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে-যার মধ্যে ছয় বছরের নিচের শিশু রয়েছে ৩৫টি। ৭ থেকে ১২ বছরের শিশু রয়েছে ৫৭টি। ১৩ থেকে ১৮ বছরের শিশু রয়েছে ১২ জন। ৩০ জনের বয়স জানা যায়নি। ৭২৫টি ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র ৪৩৬টি। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী, যাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন অসম্ভব। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা, চরমপন্থি প্রভাব এবং মানসিক বিকৃতির মধ্যে এসব অপরাধের বৃদ্ধির কারণ রয়েছে। ধর্ষণ একটি সামাজিক সমস্যা। শুধু আইন, শাস্তি কিংবা নারীকে বাক্সবন্দি ও মোটা কাপড়ে আচ্ছাদিত করে সব কাজকর্ম বাদ দিয়ে কেবলই ধর্মকর্মে মনোনিবেশ, কিংবা সবাইকে সাধু-সন্ন্যাসী হওয়ার পরামর্শ দেওয়ার মধ্যে এর কোনও সমাধান নেই। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আর রাষ্ট্রকে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’’ নারীর প্রতি এ ধরনের আচরণ দূর করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button