স্থানীয় সংবাদ

খুলনার ‘নীরব বাতিঘর’ মনোয়ারা বেগমের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টারঃ সপ্তর্ষীর সহ-সভানেত্রী, খুলনা মহিলা সমিতির প্রবীণ কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মনোয়ারা বেগম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার সময় হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার জোহর নামাজের পর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। খুলনা মহানগরীর নিখাদ মাটিতে যিনি বেড়ে উঠে এবং নিজেকে কেবলমাত্র পারিবারিক গন্ডিতে আবদ্ধ না রেখে সমাজের বিভিন্ন সেবায় নিয়োজিত হবার মনস্কতায় আপন অস্তিত্ব গড়ে তুলে নারী সমাজকে গৌরব দান করেছেন, তার নাম মনোয়ারা বেগম। খুলনার নারী শিক্ষা ও আলোকিত নারীর পদযাত্রায় তিনি অন্যতম ভূমিকা রেখেছেন। তার কার্যক্রম সমাজ কল্যাণে ও নারী জাগরণে উল্লেখযোগ্য আশার সঞ্চয় করে। আমরা সপ্তডিঙ্গা সাংস্কৃতিক ফোরাম থেকে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। একই সাথে আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। মনোয়ারা বেগম ১৯৪৫ সালে ১ ডিসেম্বর ৩৬ বাবুখান রোডে জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যবিত্ত পিতা-মাতার তিনি ৫ম সন্তান। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় বাড়ির পার্শ্বে অবস্থিত সুলতানা হামিদ আলী মহিলা মাদ্রাসায়। ১৯৬১ সালে তিনি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় স্বসম্মানে উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৭৫ সালে ডিগ্রি পাশ করেন। ১৯৮১ সালে দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে এমএ পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে খুলনা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে বিএড পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি রেলওয়ে মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতায় যোগদান করেন। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে নিরলস পরিশ্রম করে সমাজে অবদান রাখেন। তিনি ১৯৭৮ সালে কচিকাঁচার আসর, রেডক্রস ও ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ গালর্স গাইডে জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন। এছাড়াও খুলনা মহিলা সমিতি, খুলনা লেখিকা সংঘ, মানব সেবা ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ও খুলনা সদর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। প্রচার বিমুখ, শান্ত ও নম্র স্বভাবের মনোয়ারা বেগম খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এক নীরব বাতিঘর ছিলেন। তার স্নিগ্ধ আলোয় অনুজ নারীরা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়ে উঠে। দীর্ঘ সময় ধরে তার নিরলস পরিশ্রম এবং নিবেদিত সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ আমাদের নতুন ভাবনায় আশান্বিত করে। তিনি দৃশ্যত: চলে গেলেও কর্মের মাধ্যমে আমাদের অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে বেঁচে থাকবেন বহুকাল।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button