বিনিয়োগই উত্তরণের পথ

অর্থনীতির স্থবিরতা
বাংলাদেশ এখন এক কঠিন অর্থনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি। গণ-আন্দোলনের পরবর্তী রাজনৈতিক রূপান্তর এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে মানুষের মনে যে আশাবাদ জন্মেছিল, তা আজ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ, এবং বিনিয়োগে স্থবিরতা-সব মিলিয়ে অর্থনীতির গতি থমকে গেছে। পাশাপাশি- দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চিত ব্যবসায়িক পরিবেশ, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা, ঋণসংকট ও উচ্চ সুদহার, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং নীতিগত অনিশ্চয়তা-সব মিলিয়ে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ অনুপস্থিত। ফলে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ উন্নয়ন প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়েছে। প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৪ শতাংশে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনি¤œ। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, ঋণসংকট, ব্যাংক খাতের অনিশ্চয়তা এবং নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের অনীহা অর্থনীতিকে স্থবির করে তুলেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই ধীরগতি শুধু প্রবৃদ্ধিই নয়, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সম্ভাবনাকেও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। এই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ২২ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে আসে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপকভাবে কমে যায়, যা নতুন শিল্প ও উৎপাদন প্রকল্পে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। ব্যাংক খাতের অস্থিতিশীলতা অর্থনীতির দুর্বলতাকে আরও প্রকট করেছে। অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগ ফেরত যাচ্ছে। দীর্ঘ ৩০ বছরের ব্যবসায়িক সম্পর্কের ইতি টেনে বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল (পিঅ্যান্ডজি)। ইতিমধ্যে তারা বাংলাদেশে তাদের একমাত্র পরিবেশক ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডস লিমিটেডের (আইবিএল) সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। পাশাপাশি প্রাণ গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত কারখানায় উৎপাদনও স্থগিত করেছে। ফলে জিলেট, হেড অ্যান্ড শোল্ডারস, প্যানটিনের মতো জনপ্রিয় অনেক পণ্যের সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। এখন এসব পণ্য আমদানি করতে হবে। দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা বাড়ছে। তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি। কিন্তু সেই লক্ষ্যে অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। নীতিগত স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হলে অর্থনীতির এই স্থবিরতা কাটানো সম্ভব নয়।