দেশের শিক্ষার মান বাড়াতে হবে

বিবেক-জ্ঞান-বুদ্ধি ও মনুষ্যত্বের কারণে মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীব বলা হয়। সততা-নীতি-নৈতিকতা, দেশপ্রেম, পরোপকার এবং আদর্শ চরিত্রবান মানুষ হওয়ার মূল ভিত্তি সুশিক্ষা। উন্নত জাতিগঠন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের গুণগত শিক্ষার গুরুত্ব সর্বাধিক। স্বামী বিবেকানন্দের মতে, প্রত্যেক শিশুই অনন্ত শক্তির অধিকারী, সেই সুপ্ত শক্তিকে জাগ্রত করতে হবে। বাংলাদেশে বেশকিছু কাল ধরে শিক্ষার মান ক্রমে নিচের দিকে নামছে। এই দায় শিক্ষাবিষয়ক নীতি নির্ধারকদের যেমন রয়েছে, তেমনি কিছুটা শিক্ষকদেরও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাঠ দক্ষতা, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ও বাস্তব প্রয়োগ ক্ষমতায় বড়ো ধরনের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অঙ্গনে বাংলাদেশের ডিগ্রির মান অবনমনেরও খবর আসছে। বিশ^ব্যাংকের চলতি বছরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শিক্ষার মান নিয়ে যা বলা হয়েছে তা উদ্বেগজনক। একটি শিশু ১৮ বছর বয়সে সাধারণত ১১ বছর মেয়াদি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করে (প্রথম শ্রেণি থেকে একাদশ শ্রেণি)। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শেখার মান বিবেচনায় আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ৬.৫ বছরের সমতুল্য। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বাংলাদেশ সাড়ে চার বছর পিছিয়ে। প্রাথমিক পর্যায়ের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী পাঠ্যবই ঠিকভাবে পড়তে পারে না। ১৭ বছর ধরে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চললেও সৃজনশীল ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে তলানিতে। এমনকি দেশে বেকারদের মধ্যে ১৩ শতাংশই ¯œাতক। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ২০২২ সালে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, শিক্ষার গুণগত মান কমে গেছে যে দেশগুলোতে তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও নাইজেরিয়া, বেড়েছে ভিয়েতনামে। শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ছাড়া কোনো দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে গেলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত। অভাব শুধু গুণগত বা মানসম্মত শিক্ষার। শিক্ষার মান বাড়বে শিক্ষকদের গুণে। শিক্ষার মান উন্নত করতে শিক্ষকের ভূমিকাই সর্বাধিক অগ্রগণ্য। অভিভাবকদের সচেতন করার দায়িত্বও শিক্ষকদের। শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষককে আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষক দরদি মন নিয়ে শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষককেই সমাজের পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। যেহেতু শিক্ষকরা সমাজ গঠনের প্রধান কারিগর সেহেতু মেধাবীরা যাতে শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী হন সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এআইয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে মানুষকে জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে মনোযোগ বাড়াতে হবে। শিক্ষা খাতকে অবহেলা করে দেশ ও জাতির অগ্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।