মোটরবাইক সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে

দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার
মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় বেশিরভাগই প্রাণ হারাচ্ছে উঠতি বয়সের ছেলেরা। অনেক ক্ষেত্রে শখের বাইক কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ। আবদার পূরণে কিশোর-তরুণদের হাতে মোটরসাইকেল তুল দিচ্ছেন অভিভাবকরা। তরুণদের অনেকে দক্ষতা অর্জন না করে এবং নিয়ম না জেনেই মোটরসাইকেল নিয়ে মহাসড়কে উঠে যাচ্ছে। মহাসড়কে গিয়ে আবার সেটিকে তারা রেসিং ট্র্যাক বানিয়ে ফেলছে। সেসব রেসিংয়ের ভিডিও ধারণ করে সেগুলো আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হচ্ছে। এসব ভিডিও দেখে প্রভাবিত হচ্ছেন আরও অনেকে। এতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। বেপরোয়াভাবে উচ্চগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে তারা। এতে একদিকে তারা নিজেরা যেমন হতাহত হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের কারণে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ পথচারীরাও। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা মোটরসাইকেল চালকরাও বেপরোয়া। তারাও ট্র্যাফিক আইন মানতে চায় না, হেলমেট ছাড়াই বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালান। এই বেপরোয়া গতির কারণেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানায়, গত দেড় দশকে দেশে সরকারিভাবে নিবন্ধনের হিসাব আমলে নিলে এই বাহন বেড়েছে ছয় গুণ। নিবন্ধনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই বাহনে দুর্ঘটনাও বাড়ছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) বাইক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৮৩৯ জন নিহত হয়েছেন। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতি মাসে গড়ে নিহত হয়েছেন ২০৪ জন। দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাত কারণে বাইক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এর মধ্যে আছে অতিরিক্ত গতি ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে চালানো, সুরক্ষার ঘাটতি, বাহনটির রাস্তায় ছোট ও অদৃশ্য থাকা, চালকের মনোযোগ মোবাইল ফোন বা অন্যদিকে থাকা, হেলমেট না পরা, খারাপ আবহাওয়া ও রাস্তার দুরবস্থা, প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সের অভাব। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ৮৬৪ জন বাইক আরোহীর মৃত্যু হয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৫.৬৭ শতাংশ। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, হেলমেটের গুণগত মান ঠিক থাকলে এসব দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ এবং আহত হওয়ার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমবে। এর পাশাপাশি আইন প্রয়োগে কঠোরতা আনা এবং চালকদের বৈধ লাইসেন্স নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। লাইসেন্সবিহীন ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে বাইক তুলে দেওয়া বন্ধ করতে হবে।