জাতীয় সংবাদ

ছাত্রীর প্রেমিকের সন্দেহের বলি ছাত্রদলের জুবায়েদ, ধারণা পুলিশের

প্রবাহ রিপোর্ট : জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইনকে তার ছাত্রী ‘পছন্দ করতেন’ জানিয়ে পুলিশ বলছে, সেই ক্ষোভে ওই ছাত্রীর ‘প্রেমিক’ তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে জুবায়েদকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েটি দাবি করেছে, এই খুনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল সোমবার সকালে এ তথ্য দিয়েছেন বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েটি বলেছে, তার সঙ্গে মাহির রহমানের ৯ বছরের ‘প্রেমের সম্পর্ক’ ছিল। “মাহির রহমান পুরান ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজে ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ে। আর মেয়েটি পড়ে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে। পাশাপাশি বাড়িতে তাদের বেড়ে ওঠা ছোট থেকে। তাদের মধ্যে ছিলো দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্ক। চতুর্থ শ্রেণি থেকে একে অপরকে পছন্দ করতো। “কিন্তু সম্প্রতি তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলে। কিছুদিন আগে তাদের সম্পর্কের ভাঙন হয় এবং মেয়েটি তার বয়ফ্রেন্ড মাহির রহমানকে জানান, তিনি জুবায়েদকে পছন্দ করে। এটা জানার পর রাগে ক্ষোভে মাহির রহমান তার বন্ধুকে সাথে নিয়ে জুবায়েদকে হত্যা করতে পারে বলে আমরা মনে করছি।” এক প্রশ্নের জবাবে ওসি রফিকুল বলেন, সম্প্রতি মেয়েটি মাহিরকে জানান, তিনি জুবায়েদকে পছন্দ করেন। “কিন্তু জুবায়েদকে সে তার পছন্দের কথা জানায়নি। জুবায়েদের সঙ্গে মেয়েটির কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই। তাদের মধ্যে এ ধরনের কোনো বার্তা আদান-প্রদানের তথ্যও পাওয়া যায়নি। কিন্তু মেয়েটির কথার ওপর ভিত্তি করে রাগে ক্ষোভে তার প্রেমিক বন্ধুদের নিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।”
‘মেয়েটিকে চিন্তামুক্ত দেখা গেছে’
জুবায়েদ হত্যার ঘটনার পর তার ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে দেখেনি পুলিশ। থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও তার মধ্যে কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি বলে ভাষ্য বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলামের। তিনি বলেন, “তার মধ্যে কোনো হতাশা বা কান্নার কোনো ছাপ পাওয়া যায়নি। তার মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে কোনো নার্ভাসনেসও পাওয়া যায়নি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে চিন্তামুক্ত দেখা গেছে। “আমরা আরও বিস্তর তদন্ত করব। পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত জানানো হবে আনুষ্ঠানিকভাবে।” নিহত জুবায়েদ হোসাইন জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। বছর খানেক ধরে জুবায়েদ পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ওই ছাত্রীকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞন পড়াতেন। গত রোববার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ওই ছাত্রীর বাসার নিচে ছুরিকাঘাতের শিকার হন জুবায়েদ। এ অবস্থাতেই ওই বাসার তিনতলা পর্যন্ত উঠতেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর সিঁড়ির নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত রক্ত পড়েছিল। তিনতলার সিঁড়িতে উপুড় হয়ে পড়েছিল নিথর জুবায়েদ। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্র ঘটনাস্থলে জড়ো হন তার সহপাঠী, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিচারের দাবিতে তারা বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ ওই বাসায় ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর রাত ১১টায় ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নেয় পুলিশ; আর ময়নাতদন্তের জন্য জুবায়েদের লাশ পাঠানো হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠায়। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি রাতে বলেন, “তাকে (ওই ছাত্রীকে) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।” এদিকে এ হত্যাকা-ের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রাত পৌনে ১১টার দিকে তাঁতীবাজার এলাকায় প্রধান সড়ক অবরোধ করে। প্রায় এক ঘণ্টা রাস্তা আটকে রাখার পর রাত পৌনে ১২টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে বংশাল থানার দিকে রওনা হয়। পরে সেখানে অবস্থান করে তারা স্লোগান দেন- ‘আমার ভাই মর্গে, খুনি কেন বাইরে’, ‘বিচার, বিচার, বিচার চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত ঝরে, প্রশাসন কী করে’, ‘প্রশাসনের তালবাহানা; চলবে না, চলবে না’। গতকাল সোমবার দুপুরে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জুবায়েদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
হয়নি মামলা
শিক্ষার্থী জুবায়েদ হোসাইন হত্যার ১৮ ঘণ্টা পেরোলেও গত রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত মামলা হয়নি। তার পরিবার রাত ১টা থেকে চেষ্টা করে মামলা করতে পারেনি। জানতে চাইলে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “কাদের কাদের আসামি করা হবে এবং তাদের যাবতীয় তথ্য নিতে একটু সময় লাগছে। “আসামি ধরতে আমাদের অভিযান চলছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।”

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button