সম্পাদকীয়

দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানে স্থবিরতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিনিয়োগে স্থবিরতা ও কর্মসংস্থানের ঘাটতি। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি থমকে গেছে, উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থাহীনতা প্রকট। ফলে দেশি-বিদেশি নতুন উদ্যোগে সাড়া মিলছে না, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কারখানা। কর্মসংস্থান না বাড়ায় বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে। এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের হার এবং জ্বালানি সংকট। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) অক্টোবরের ইকোনমিক আপডেট বলছে, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৬.৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনি¤œ। সুদের হার ১৩ থেকে ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে, ফলে নতুন উদ্যোগ নেওয়া উদ্যোক্তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঋণ বিতরণে ধীরগতি এবং উচ্চ সুদের কারণে প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, নতুন কারখানা স্থাপন বা ব্যবসা বড় করার আগ্রহ কমে গেছে। এর ফলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাও কঠিন হয়ে উঠেছে। সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৩৬ শতাংশ, যা নি¤œবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য বড় চাপ। আয় না বাড়ায় তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমছে, শিল্পোৎপাদনেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তার ঘাটতি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সম্ভাবনাকে গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে পিছিয়ে পড়লে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। তাই এখনই প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা, সহজ শর্তে ঋণ, জ্বালানি সরবরাহে নিরবচ্ছিন্নতা এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা। পরিকল্পিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের গতি ফেরানো সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের উচিত দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button