গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি

ব্যাংক খাতে আস্থার সংকট
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে এক গভীর আস্থাহীনতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে পাঁচটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক -এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে যে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, তা শুধু আর্থিক নয়, সামাজিক স্থিতির জন্যও বড় হুমকি। আমানতকারীরা তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ তুলতে পারছেন না, প্রতিশ্রুত মুনাফা পাচ্ছেন না, এমনকি মেয়াদ শেষে ফেরত পাওয়া অর্থও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে- যা সরাসরি বেআইনি ও অনৈতিক। এই সংকটের গভীরতা বোঝা যায় যখন দেখা যায়, আমানতকারীরা তাঁদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের জন্য ব্যাংকে রাখা অর্থ তুলতে পারছেন না। দীর্ঘ মেয়াদি সঞ্চয়, অবসরকালীন নিরাপত্তা, চিকিৎসা বা শিক্ষার খরচ- সবই অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা যখন এমনভাবে ভেঙে পড়ে, তখন তা শুধু আর্থিক খাত নয়, গোটা অর্থনীতির জন্যই অশনিসংকেত। এই পরিস্থিতি একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেয়: ব্যাংক খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা ছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব নয়। অর্থ উপদেষ্টার ভাষায়, ব্যাংক খাতের ৮০ শতাংশ অর্থ ‘বাইরে চলে যাওয়া’র প্রভাব এখন সাধারণ আমানতকারীদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে, ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব কতটা গভীরে পৌঁছেছে। শুধু কাঠামোগত সমাধান যথেষ্ট নয়- মূল সমস্যা চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড পিএলসি’ গঠনের সিদ্ধান্ত একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও, এটি যেন কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে। আমানতকারীদের অর্থ ফেরত নিশ্চিত করতে হবে, কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে হবে, এবং অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে- সম্পদ জব্দ, বিক্রি ও ক্ষতিপূরণ আদায়সহ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত এই সংকটে দৃশ্যমান, নিরপেক্ষ ও দ্রুত হস্তক্ষেপ করা। ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। এ খাতে রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা দূর না হলে, ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
