সম্পাদকীয়

প্রশাসনে অস্বচ্ছ নিয়োগ: নির্বাচন ও সুশাসনের জন্য অশনিসংকেত

প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্ব রাষ্ট্রের সুশাসনের অন্যতম ভিত্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন সেই ভিত্তির ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। গভীর রাতে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, মাঠ প্রশাসনে অভিজ্ঞতা সীমিত এমন কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ জেলা বাগেরহাটের ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্ববর্তী বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী একাধিক কর্মকর্তাও নতুন করে পদোন্নতি বা বদলি পেয়েছেন-যা প্রশাসন ও নির্বাচন উভয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় বাড়িয়েছে। বিসিএস ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা গোলাম মো. বাতেন মাঠ পর্যায়ে মাত্র এক বছর দুই মাস উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবু তাঁকে জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। সাধারণত এই পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসনে অন্তত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে-অভিজ্ঞতার মানদ- উপেক্ষা করে নিয়োগের পেছনে অন্য কোনো প্রভাব কাজ করছে কি না। এমন নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশাসনের ভেতরও চলছে গুঞ্জন। অনেক কর্মকর্তা মনে করছেন, এ ধরনের পদায়ন প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ও মনোবল ক্ষুণœ করবে। নির্বাচনের আগে প্রশাসনে ঘন ঘন রদবদল এবং রাতারাতি প্রজ্ঞাপন শুধু অনিশ্চয়তা নয়, নির্বাচনী প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পাঠানো হলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট পরিচালনা ব্যাহত হতে পারে। অধিকতর উদ্বেগজনক হলো, অতীতে বিতর্কিত নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কিছু কর্মকর্তাকে নতুন করে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা ছিল-পূর্ববর্তী তিন নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের এবার মাঠে রাখা হবে না। কিন্তু বাস্তবে সেই নীতি মানা হয়নি। এতে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আরও গভীর হয়েছে। প্রশাসন হলো রাষ্ট্রযন্ত্রের মেরুদ-। এই কাঠামোতে যদি যোগ্যতা, সিনিয়রিটি ও অভিজ্ঞতার চেয়ে প্রভাব, পছন্দ ও লেনদেন অগ্রাধিকার পায়, তাহলে সুশাসনের ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। নির্বাচনের আগে এমন বিতর্কিত পদায়ন জনগণের আস্থা নষ্ট করতে পারে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ^াসযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে। সরকারের উচিত দ্রুত এই নিয়োগপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা এবং অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রশাসনের ভারসাম্য পুনঃস্থাপন করা। কারণ প্রশাসনের পেশাদারিত্বের ক্ষতি শুধু নির্বাচনের নয়-রাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্যও বিপজ্জনক।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button