সম্পাদকীয়

নষ্ট হচ্ছে ন্যায়বিচারের সাক্ষী কোটি টাকার সম্পদ

রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বর কিংবা শহরের ছয়টি থানা প্রাঙ্গণ-যেদিকেই তাকানো যায়, সারি সারি মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, অটোরিকশা ও ট্রাক পড়ে আছে মরিচা ধরা অবস্থায়। দেখে মনে হতে পারে এটি কোনো প্রদর্শনী। কিন্তু বাস্তবতা হলো-এসব যানবাহন বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে বছরের পর বছর পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে, নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান, চোরাই গাড়ি উদ্ধার বা অনিবন্ধিত যানবাহন জব্দের পর আদালতের আদেশে এসব যানবাহন সংরক্ষিত রাখা হয়। কিন্তু মামলা নিষ্পত্তির ধীরগতি, প্রশাসনিক জটিলতা ও স্থান সংকটের কারণে এগুলোর ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে না। ফলে একদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ ও স্থান সংকট-দুটো সমস্যাই ক্রমে বাড়ছে। রংপুরে বর্তমানে প্রায় দুই হাজারের মতো যানবাহন মামলার আলামত হিসেবে পড়ে আছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। অনেক গাড়ির জানালা ভাঙা, টায়ার পচে গেছে, ইঞ্জিন অকেজো। বর্ষা-বাদলের পানি জমে এগুলো পরিণত হচ্ছে মশার প্রজননক্ষেত্রে। আদালত প্রাঙ্গণ, যা হওয়া উচিত ছিল আইন ও শৃঙ্খলার প্রতীক-তা এখন যেন মরিচা ধরা লোহা ও ধুলোবালির ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ বিপুল সম্পদ বছরের পর বছর এভাবে নষ্ট হতে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? মামলা যত দীর্ঘ হয়, রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিও তত বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মালিকেরা বৈধভাবে যানবাহন ফেরত চাইতে পারেন না, আবার আদালতও মামলার নিষ্পত্তি ছাড়াই নিলামে তুলতে পারে না। এভাবে ‘আইনি জটিলতা’ নামের বেড়াজালে আটকে পড়ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও নাগরিক অধিকার-উভয়ই। সমাধান আসতে পারে দ্রুত বিচার ও প্রশাসনিক সমন্বয়ের মাধ্যমে। আদালত, পুলিশ ও বিআরটিএ যৌথভাবে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হলে আদালতের অনুমতিতে এসব যানবাহন নিলামে তোলা যায় বা রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করা যায়। একই সঙ্গে প্রয়োজন সংরক্ষণের জন্য পৃথক নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা। রংপুরের আদালত প্রাঙ্গণে মরিচা ধরা প্রতিটি গাড়ি কেবল মামলার আলামত নয়-এগুলো আমাদের বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক অদক্ষতার নীরব সাক্ষী। ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় পড়ে থাকা এসব যানবাহন যেন রাষ্ট্রীয় সম্পদের কবরস্থানে পরিণত না হয়-এখনই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button