সম্পাদকীয়

সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?

প্রকাশ্যে অপরাধের ভয়ংকর চিত্র

প্রকাশ্যে হত্যাকা- জনসাধারণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। গত ১৪ মাসে সরকার বারবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা গেছে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ মতো কিছু জনতুষ্টিবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তা কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে-পরে ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা-ব্যবস্থার সুযোগে অনেক অপরাধী জেল থেকে পালিয়ে যান, এর মধ্যে জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও ছিলেন। ভঙ্গুর প্রশাসনিক ব্যবস্থার সুযোগে জামিনেও অনেকে বের হয়ে যান। তাঁদের অনেককেই আর গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এ সময় থানা ও কারাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদও খোয়া যায়, যার অনেকটাই উদ্ধার করা যায়নি। এ ধরনের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও খোয়া যাওয়া অস্ত্রের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হতে পারে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা নানা সময়ে সরকারকে সতর্ক করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমবর্ধমান অপরাধপ্রবণতা ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি মানুষের প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়েছে। একই দিনে মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ সাত জেলায় চারটি খুন ও চারটি লাশ উদ্ধারের খবর দেশজুড়ে অপরাধপ্রবণতার বিস্তার নিশ্চিত করে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুন্সীগঞ্জে সংঘর্ষ, মাদারীপুর ও চট্টগ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে পুত্র কর্তৃক বাবা খুন এবং বগুড়ায় মুরগি চুরি নিয়ে কাঠমিস্ত্রিকে কুপিয়ে হত্যার মতো ঘটনাগুলো পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনগুলোর দুর্বলতা এবং তুচ্ছ কারণে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট করে। এই ক্রমবর্ধমান নৈরাজ্য এটাই প্রমাণ করে যে আইনের শাসন এবং নাগরিক নিরাপত্তা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, শুধু পুলিশি অভিযান যথেষ্ট নয়। অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মতে, সামাজিক সচেতনতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা গেলে অপরাধের হার কমানো সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং ককটেল হামলা ও যানবাহনে আগুন দেওয়ার মতো নাশকতামূলক ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা নিরসনের দায়িত্ব সরকারের। বর্তমান বাস্তবতায় জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নাশকতা বন্ধে সরকারের বাড়তি মনোযোগ জরুরি। হত্যাকা-, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য এক গুরুতর হুমকি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button