বাগেরহাটের বহুল আলোচিত নিউ বসুন্ধরা’র চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা

আজাদুল হক, বাগেরহাট ঃ
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সময়ে বহুল আলোচিত অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট এর চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার স্ত্রীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ২৩৫ কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন মোঃ আনিসুর রহমান (৬২), সালেহা বেগম ও মান্নানের স্ত্রী জেসমিন নাহার। বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান বলেন প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ২০ হাজার জন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রায় ২৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। এই অর্থের একটি বড় অংশ মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অন্যত্র স্থানান্তরের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। সিআইডি জানায়, বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মান্নান তালুকদার। ২০১০ সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি “মানুষ মানুষের জন্য” সেøাগান নিয়ে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত হলেও ব্যবসার কার্যক্রম ছিল কয়েকজন ব্যক্তিকেন্দ্রিক। প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ‘সুদমুক্ত ও হালাল ব্যবসায় লাভের নিশ্চয়তা’ দিয়ে প্রচারণা চালায়। বলা হয়, ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে বিনিয়োগ করা অর্থ দ্বিগুণ হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ না করে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তা অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করে। তদন্তে দেখা গেছে, আব্দুল মান্নান তালুকদার সংগৃহীত অর্থের মধ্যে ৬৬ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা নিজের মালিকানাধীন সাবিল গ্রুপের ৬টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। এসব সহযোগী প্রতিষ্ঠান হলো এ্যাজাক্্র জুট মিলস লিমিটেড, সাবিল ড্রেজিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (বাগেরহাট), সাবিল জেনারেল হাসপাতাল (পিরোজপুর), সাবিল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প (বাগেরহাট), সাবিল ল প্লাজা ও সাবিল মৎস্য প্রকল্প (বাগেরহাট)। বাকি অর্থ বিভিন্ন নামে-বেনামে অন্য প্রতিষ্ঠানেও স্থানান্তর করা হয়। প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ মানিলন্ডারিংয়ের সত্যতা পাওয়ায় সিআইডি বাদী হয়ে আব্দুল মান্নান তালুকদারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সদর থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সময়ে চাকুরী থেকে অবসরে আসা আব্দুল মান্নান তালুকদার নিজে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের বাগেরহাট মোজাহিদ কমিটির সভাপতি হিসাবে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিন কে ব্যবহার করে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট নামে এ অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বাগেরহাটের একজন সংসদ সদস্যের নেপথ্য সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সংবাদ কর্মীদের ম্যানেজ করে আব্দুল মান্নান এ ব্যবসার নামে হাজার হাজার মানুষ কে পথে বসিয়ে দেয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্দি থাকেন তিনি। আদালতের নির্দেশে দুদক তার সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেয়। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে জানা গেছে।



