কক্সবাজারে বাড়ছে মানব পাচার: ব্যবস্থা নেয়া জরুরি

কক্সবাজারে মানব পাচার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী উভয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের যোগসাজশে অপহরণ, মুক্তিপণ ও এর সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক রয়েছে উখিয়া ও টেকনাফে। স্থানীয়দের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শিশু, নারী ও পুরুষ পাচারের জন্য সংগ্রহ করে। সুযোগ বুঝে ট্রলারে তুলে দেওয়া হয় তাদের। এর মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো দালালরা তাদের আটকে মুক্তিপণ আদায় করে। জানা গেছে, সমুদ্রপথে মানব পাচার এখনো প্রাণঘাতী হুমকি। ২০২৩ সালে সারা দেশে ১৩৭টি মানব পাচারের মামলা নথিভুক্ত হয়, যার মধ্যে প্রায় ৪৪ ভাগ ভুক্তভোগী কক্সবাজার জেলার। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৬৬ ভাগ ছিল পুরুষ, যা মানব পাচারের ক্ষেত্রে লিঙ্গগত বৈচিত্র্য এবং নতুন ধরনের কৌশল ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। অনেক পুরুষ ভুক্তভোগীকে বিদেশে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয় এবং পরে তাদের বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হয়। অনেক রোহিঙ্গা তাদের ক্যাম্পের আঁটসাঁট জীবন থেকে মুক্তির আশায় ও উন্নত জীবনের সন্ধানে ঝুঁকি নিয়েও সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে মরিয়া। রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েশিশুরা সবচেয়ে বেশি পাচারের শিকার হচ্ছে। পাচারের নিয়মিত রুট হয়ে ওঠায় বাংলাদেশি তরুণদের একটি অংশকেও মানব পাচারকারীরা এই অনিরাপদ রুটে সমুদ্র পাড়ি দিতে প্রলুব্ধ করছেন। মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মৃত্যু, পাচারকারীদের হাতে নির্যাতন, ট্রলারে খাবার ও পানি ফুরিয়ে যাওয়ায় মৃত্যু-এ রকম উদ্বেগজনক সংবাদ বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। ২০২৪ সালে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় ৬৫৭ জনের বেশি রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। মানব পাচারের কারণে মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আমাদের শ্রমবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে যে-কোনো মূল্যে ঝুঁকিপূর্ণ এই মানব পাচার বন্ধ করার বিকল্প নেই। মানব পাচার বন্ধ করতে হলে সরকারকে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশে মানব পাচারের বিরুদ্ধে কোনো সরকারকেই দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বরং বিগত সময়ে সরকার ঘনিষ্ঠরাই মানব পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে সব সরকারের আমলেই মানব পাচারের সিন্ডিকেট সক্রিয় থেকেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ছোটোখাটো মানব পাচারকারী ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছে মূল অপরাধীরা। এখনো সক্রিয় রয়েছে মানবপাচারের সিন্ডিকেট। সরকারের কঠোর অবস্থান না থাকায় অনেকেই মানব পাচারকে কম ঝুঁকির ব্যাবসা হিসেবে বেছে নিয়েছে। কক্সবাজার দিয়ে সমুদ্রপথে মানবপাচার বন্ধে সরকারকে শক্ত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
