রাজধানীর ত্রুটিপূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

একটা ঘনবসতিপূর্ণ দেশে মানুষ জীবিকার জন্য শহরমুখী হচ্ছে। জীবিকা যেহেতু প্রধান উদ্দেশ্য, তাই তারা রাজধানীমুখী হচ্ছে। কারণে এখানে অন্য জায়গা থেকে জীবিকারে সুযোগ বেশি। দুই কোটিরও বেশি মানুষ এখন ঢাকায় বসবাস করছে এবং প্রতিদিনই বসবাসের জন্য মানুষ আসছে। তাদের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার মতো অবকাঠামো এত দ্রুত তৈরি করা সম্ভব হয় না। ফলে কাক্সিক্ষত অনেক নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। উন্নত দেশের মতো আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আমাদের দেশে এখনো গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতারও অভাব রয়েছে। যত্রতত্র ময়লা ফেলা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বর্জ্য উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় এর ব্যবস্থাপনাও দিন দিন কঠিন করে তুলছে। আরেকটি বড়ো সমস্যা হলো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরনের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই বর্জ্য সংগ্রহ ও বাছাইকরণের কাজ করছে। তারা প্রতিদিন উন্মুক্ত পরিবেশে কাজ করে যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাণিবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিষ্কার, নোংরা ও নর্দমার মতো স্থানেই মাছির জন্ম হয়। বর্তমানে ঢাকা শহরের চারিদিকে যে নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করছে এবং সড়ক ও বাসাবাড়িতে বর্জ্যরে স্তূপ যেভাবে বাড়ছে, তাতে মাছির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, জুরাইন হতে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে জমে রয়েছে বর্জ্যরে স্তূপ। ইহা ছাড়া এজিবি কলোনি, মান্ডা, বাড্ডা, গুলশান, গুদারাঘাটের মতো সেকেন্ডারি বর্জ্যরে ভাগাড়গুলিতে মাছির উপদ্রব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এটা জনগণকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, মশা ও মাছির বৃদ্ধি সরাসরি জনস্বাস্থ্যের উপর কুপ্রভাব ফেলে। মাছি বাড়লে টাইফয়েড, ডায়রিয়া ও আমাশয়ের মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। বর্জ্য বৃদ্ধি পেলে বাড়ে ইঁদুরের সংখ্যাও। মাছি বর্জ্য হতে জীবাণু বহন করে খাদ্যে মিশিয়ে দেয় এবং সেই খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষ নানা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। অতএব, বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় সরকার এবং সিটি করপোরেশন এই বিষয়ে তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না। নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাগুলির মধ্যে একটি হলো পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটি দূরীকরণে তারা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কেন এত উদাসীন? নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন স্থাপন এবং বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির প্রয়োগ আজ সময়ের অপরিহার্য দাবি। কেবল তাই নয়, নগরবাসীকেও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়মাবলি মেনে চলতে হবে।
