সম্পাদকীয়

দালালদের তৎপরতা বন্ধ করতেই হবে

আর্থিক উন্নতি ও ভালো আয়ের আশায় অনেকেই বিদেশ যেতে চান, কিন্তু সাধারণ মানুষের বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া ও কাজ সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। ফলে বিদেশে যাওয়ার জন্য অধিকাংশ মানুষ স্থানীয় দালাল ও এজেন্সির কাছে ধরনা দিয়ে থাকেন। এতে অনেকেই দালালের মাধ্যমে প্রতারিত হন, জমি বিক্রি ও ঋণের টাকা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের একটি বড় অংশ বিদেশে গিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন। পরিবারকে উন্নত করা, সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যাশা থেকেই তারা দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গ্রামের সাধারণ মানুষ ভেবেচিন্তে এই পথে আসলেও তথ্যের অভাবে তারা প্রতারণার শিকার হন। দালালরা তাদের স্বপ্নকে মূলধন হিসেবে ব্যবহার করে এবং অতিরঞ্জিত সুযোগের আশ্বাস দিয়ে প্রলুব্ধ করে। এভাবে সঞ্চিত টাকার পাশাপাশি ধার-দেনা করে বিদেশে যাওয়ার উদ্যোগ নেন অনেকেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে যায়। দালালচক্র সাধারণত বিদেশে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে শ্রমজীবী মানুষকে ফাঁদে ফেলে। তারা মিথ্যা কাগজপত্র, জাল ভিসা, ভুয়া প্রশিক্ষণ সনদ এবং অপ্রমাণিত নিয়োগপত্র দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। গ্রামের সাধারণ মানুষ এসব নথির সত্যতা যাচাই করতে পারেন না, ফলে সহজেই প্রতারণার শিকার হন। দালালরা একেকজন থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং অনেক সময় ভিসা না দিয়েই গা-ঢাকা দেয়। এই প্রক্রিয়ায় বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। প্রতারণার কৌশল ক্রমেই বৈচিত্র্যময় হচ্ছে, যা জনসাধারণের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশে যাওয়ার জন্য শ্রমজীবী মানুষরা যখন দালালদের কাছে টাকা দেন, তখন প্রায়শই তাদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ থাকে না। এই সুযোগে গ্রামকেন্দ্রিক কিছু মহাজন চড়া সুদে টাকা ধার দেয়। দালালদের প্রতারণায় টাকা খোয়া গেলে এই মহাজনদের চাপ ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আরও কঠিন সংকটে ফেলে। অনেক সময় পরিবারগুলো ঘরবাড়ি, জমিজমা বিক্রি করে মহাজনের ঋণ শোধ করতে বাধ্য হয়। দালাল চক্রের সঙ্গে এই মহাজন চক্রেরও যোগসাজশ থাকতে পারে, যারা জানে যে বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন ব্যর্থ হলে পরিবারগুলো দ্রুত ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হবে। এই দ্বিমুখী শোষণ দরিদ্রদের জীবনকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে দেয়। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় অধিকতর মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি সমাজের সব পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন এসব কাজে জড়িত বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি ও দালালদের নির্মূল করা। শুধু তাই নয়, এমন অপকর্মে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button