কঠোরভাবে দমন করতে হবে

পথে পথে চাঁদাবাজি
দেশের পরিবহন খাত এখন এক ভয়াবহ সংকটে। সড়ক-মহাসড়ক থেকে শুরু করে নদীপথ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে চলছে লাগামহীন চাঁদাবাজি। ট্রাকচালক থেকে নৌযানের শ্রমিক সবাইকে প্রতিদিনই অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে। চেকপোস্টে কিংবা নদীর চরে অবাধে চলছে চাঁদা আদায়, মারধর ও লুটপাট। এতে শুধু পরিবহন খাত নয়, কৃষক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ ভোক্তার জীবনও হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। হাইওয়েতে প্রতিদিন হাজারো ট্রাকচালককে চাঁদা দিতে হচ্ছে। নওগাঁ থেকে ঢাকায় আসা এক চালককে ২ হাজার ৭৫০ টাকা দিতে হয়েছে, আবার মেহেরপুর থেকে তিন টনের ট্রাকে ৩ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং প্রতিদিনের বাস্তবতা। নৌপথের পরিস্থিতি আরও ভয়াল। মেঘনা, পদ্মা, শীতলক্ষ্যা থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র নৌযান আটকে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। শ্রমিকদের ওপর হামলা, মালপত্র লুটপাট—সবই প্রকাশ্যে চলছে। নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ড মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ, সদর দপ্তরের ছয় দফা নির্দেশনা সবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কার্যকর বাস্তবায়ন না হলে এগুলো কাগুজে উদ্যোগেই সীমাবদ্ধ থাকে। সড়ক ও নৌপথ দেশের অর্থনীতির প্রাণধারা। এই দুই খাত চাঁদাবাজির দখলে গেলে কৃষক থেকে ব্যবসায়ী, ভোক্তা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পণ্য পরিবহনের অতিরিক্ত ব্যয় বাজারকে অস্থিতিশীল করে, ভোক্তার জীবনযাত্রা কঠিন করে তোলে। চাঁদাবাজি দমনে কেবল অভিযান নয়, দৃশ্যমান আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন। প্রশাসনিক দুর্নীতি, অপরাধচক্রের দৌরাত্ম্য ও শ্রমিক সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব একযোগে মোকাবিলা করতে হবে। পরিবহন খাতকে মুক্ত করতে হলে শূন্য সহনশীলতার নীতি বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে। দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনের স্বার্থে এখনই প্রয়োজন দৃঢ়, স্বচ্ছ ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ।
