সম্পাদকীয়

শিশুর রক্তে সিসার উচ্চমাত্রা উদ্বেগজনক

সিসা মূলত এক ধরনের মারাত্মক নিউরোটক্সিন, যা মস্তিষ্কের বিষাক্ত পদার্থ হিসেবে বিবেচিত। সিসা খালি চোখে দেখা যায় না, এমন কী এর গন্ধও পাওয়া না। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। সিসা দূষণের কবলে পড়া শিশু যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন তার মধ্যে শারীরিক, মানসিক ও স্নায়ুবিক ক্ষতির ঝুঁকি থেকে যায়। এটি প্রাপ্ত বয়স্কদের হƒদরোগের বড় কারণ। সিসা একবার মানবদেহে প্রবেশ করলে তা আর বের হয় না। সিসা মূলত মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। বাংলাদেশের শিশুরা সিসা দূষণের শিকার হচ্ছে, যা তাদের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং তাদের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। সিসা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক ক্ষতি করে। এটি শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সিসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এতে বুদ্ধিমত্তা ও শেখার ক্ষমতা কমে যায়, যা পরবর্তী প্রজন্মের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলে। ঢাকায় বাস করা দুই থেকে চার বছর বয়সী প্রতিটি শিশুর রক্তে সিসার উপস্থিতি মিলছে। ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় এই উদ্বেগজনক চিত্র উঠে আসে। ২০১২ সালে রাজধানীর বস্তি এলাকায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৭ শতাংশ শিশুর রক্তে প্রতি লিটারে সিসার মাত্রা ৫০ মাইক্রোগ্রাম। ২০২৫ সালে এসে এই সংখ্যা ৯৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে এবং সিসার পরিমাণও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গবেষণাভুক্ত এলাকায় ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং শিল্পের ঘনত্বই এই ফলাফলের মূল কারণ হতে পারে। দেশের ৩৬ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু সিসার ক্ষতিকর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত। যার মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ২ কোটি শিশু সিসার ক্ষতিকর প্রভাবে বেড়ে উঠেছে দুর্বল মেধা নিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সিসার কোনো গ্রহণযোগ্য মাত্রা নেই, যদিও বাংলাদেশের শিশুদের শরীরে সিসার গড় পরিমাণ ৬৮ মাইক্রোগ্রাম। এমনকি দেশে প্রতি বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪ জনের মৃত্যু হয়, তার পেছনেও সিসার পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। আমরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে যে বাতাস নিই, যে খাবার খাই, দূষিত মাটি বা ধূলিকণা স্পর্শ করি, এমনকি গর্ভাবস্থায় মায়ের থেকেও সিসা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এভাবে নানা উপায়ে সিসা প্রবেশ করে বলে এ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের এখনই এই সিসা নিঃসরণকারী ক্ষতিকর উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে, যাতে প্রতিটি শিশু সুস্থ ও বুদ্ধিমান হয়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং আমাদের দেশের উৎকর্ষ সাধনে ভূমিকা রাখতে পারে।’ শহর বা জনবহুল স্থান থেকে সিসা কারখানা সরাতে হবে। এজন্য সিসা দূষণ বন্ধে জাতীয় উদ্যোগ দরকার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button