জাতীয় সংবাদ

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট : সিইসি

তফসিল চলতি সপ্তাহে

প্রবাহ রিপোর্ট : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। রোববার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কমিশনারগণ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচন আয়োজনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানান।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়াও বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠকে সিইসি নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি সঠিক ও সুন্দরভাবে এগোচ্ছে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও একই দিনে গণভোট আয়োজনের জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রস্তুতিকালে ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা।
নির্বাচনের প্রস্তুতিকালে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নাগরিকরা নির্বাচনী কর্মকা-ে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন, যা দেশে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি করেছে।
এ সময় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে সরকার।’ তিনি বলেন, ‘জাতির জন্য প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে আপনারা (ইসি) চালকের আসনে আছেন। আমাদেরকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন দিতে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতিকে আমরা ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছি।
চলতি সপ্তাহেই জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের তফসিল চলতি সপ্তাহেই ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন- সপ্তাহের যেকোনো একদিন তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল-পূর্ব কার্যক্রমের প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দশম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিবাচন কমিশনার এসব তথ্য জানান। সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সানাউল্লাহ বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে রীতি অনুযায়ী কিছু কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। এর অংশ হিসেবে পুরো কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তফসিল ঘোষণা বিষয়ক বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছে সোমবার পত্র পাঠানো হবে। তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার আগে প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ কাজই সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন ভোট শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। এর ফলে ভোটাররা সকালে আধা ঘণ্টা এবং বিকেলেও আধা ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় পাবেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরে আরেকটি তালিকা পাঠানো হবে, যেখানে পোস্টাল ভোট প্রদানকারীদের (ওসিবি এবং আইসিপিভি) ইমপ্রিন্ট যুক্ত থাকবে। এছাড়া মাঠ পর্যায় থেকে যে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং অফিসারের তালিকা পাঠানো হয়েছে, সেটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভোটকর্মী হিসেবে যুক্ত করা হবে। বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আপাতত নিয়োগ না দিয়ে রিজার্ভে রাখা হবে; একান্ত প্রয়োজন হলে তাদের বিবেচনায় নেওয়া হবে। সানাউল্লাহ বলেন, দুটি নির্বাচন-জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট একসঙ্গে আয়োজন করতে সময় ও ব্যবস্থাপনায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী সামগ্রী পরিবহনের বিষয়ে তিনি বলেন, আগের মতোই নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট পেপারসহ সব সামগ্রী ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। এ ছাড়া ভোটের দিন যাতে কোনো জটিলতা না হয়, সে জন্য কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় লজিস্টিকসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, ভোটকক্ষে ভোটারদের সুবিধার জন্য একাধিক সিক্রেট বুথ স্থাপন করা হবে। যেখানে বুথ বাড়ানোর পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে না, সেখানে আলাদা করে অতিরিক্ত বুথ তৈরি করা হবে। পূর্বে অনুষ্ঠিত মক ভোটিংয়ের অভিজ্ঞতা এবং মাঠপর্যায়ে ভোট পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের মতামত বিবেচনায় এনে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
গণভোট সংক্রান্ত প্রচারণার বিষয়ে তিনি জানান, সরকার বিস্তৃত কর্মসূচি গ্রহণ করছে এবং নির্বাচন কমিশন এই প্রচারণায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই গণভোটের প্রশ্ন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান, সে জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে বড় আকারে ছাপানো গণভোট ব্যালট লাইনের সামনে টানিয়ে রাখা হবে। পঙ্গু, বয়স্ক, গর্ভবতী নারীসহ বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন এমন ভোটারদের জন্য কেন্দ্রগুলোতে আলাদা নির্দেশনা থাকবে, যাতে তারা সহজে ভোট দিতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button