স্থানীয় সংবাদ

খুলনা ওয়াসায় ২৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পে পিডি নিয়োগে অবৈধ হস্তক্ষেপের অভিযোগ

শ্রমিক-কর্মচারিদের মধ্যে ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনায় নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রায় ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগকে কেন্দ্র করে খুলনা ওয়াসায় অবৈধ হস্তক্ষেপ ও তদ্বিরবাজির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী তদ্বিরে চাকরি পাওয়া ও বিগত দিনে খুলনার কথিত গণভবন শেখবাড়ির সমন্বয়ক একজন প্রকৌশলীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পিডি নিয়োগের লক্ষ্যে এক তরুন বোর্ড মেম্বরকে কাজে লাগানো হয়েছে। যিনি বিগত দিনে আইইবি’র নির্বাচন করেছেন, আওয়ামী ঘরানার প্যানেল থেকে। হাল জামানায় তিনি বলে বেড়াচ্ছেন, তিনি এক সময় শিবির করতেন। ওয়াসা ভবনে প্রচার রয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকার মিশন নিয়ে নেমেছে একটি চক্র।
এর আগে সরকার ‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২)-এর জন্য মোট ২,৫৯৮৫৯.৯৭ লাখ টাকার প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রেরিত চিঠিতে এ বরাদ্দের অনুমোদন প্রদান করা হয়। তার আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে।
একাধিক সূত্র জানায়, গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) খুলনা ওয়াসার নতুন এমডি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান যোগদান করেন। তার যোগদানের পরের দিন সকালে দপ্তরে হাজির হন ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট পরবর্তী ছাত্র প্রতিনিধি থেকে নতুন নিয়োগ পাওয়া বোর্ড সদস্য ইব্রাহিম খলিল। যার সঙ্গে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোচিত সমন্বয়ক নুসরাত তাবাস্সুম, খুলনা-১ আসনে এনসিপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া অহিদুজ্জামান, তাদের সহযোগী আলিফ, আরিয়ান, সাব্বির ও সাইম। এ সময় তারা নিয়োগ পদোন্নতিসহ ওয়াসার ফেস-২ প্রকল্পের পিডি নিয়োগ নিয়ে সুপারিশের নামে এমডিকে চাপ সৃষ্টি করেন। ওয়াসার ওই বোর্ড সদস্যের বিরুদ্ধে উঠেছে এমন অভিযোগ। এর পিছনে মোটা অংকের অর্থের লেনদেন রয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
সচেতন মহলের আশঙ্কা, তদ্বিরের মাধ্যমে পিডি হওয়ার পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এমনকি যিনি পিডি পদে আগ্রহী সেই প্রকৌশলী পূর্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও এখন সাবেক শিবির নেতা পরিচয় ব্যবহার করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে চাপ সৃষ্টির বিষয়টি এমডি অস্বীকার করে বলেন, এডিপি’র বাধ্যবাধকতার কারণে আগে থেকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, টেন্ডার আহবানসহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। তার পর এডিপি টাকা ছাড় করে। বিষয়টি আমি যোগদানের আগে থেকে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা ছিল। তারই ধারবাহিকতায় ১১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) খুলনার ওয়াসার জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৪ জনের নাম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং তিন জন নির্বাহী প্রকৌশলী রয়েছে।
তিনি বলেন, এটি নিয়োগের দায়িত্ব সম্পূর্ণ মন্ত্রণালয়ের। তবে তিনি পিডি নিয়োগে চাপ প্রয়োগের বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করেননি।
ওয়াসার পিডি নিয়োগে শর্ত রয়েছে প্রকল্পের পিডি নিয়োগে ৪র্থ গ্রেডের প্রকৌশলী হতে হবে। তবে যার নামে তদবিরে নামা হয়েছে তিনি ৬ষ্ঠ গ্রেডের। তাকে পদোন্নতি দিয়েই পিডি নিয়োগের পায়তারা চলছে।
খুলনা ওয়াসার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরের আগে ঢাকার একজন আলোচিত ‘সমন্বয়ক’ ও একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেত্রীর নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি দল এমডির কক্ষে গিয়ে এক ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের নাম ব্যবহার করে এমডিকে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর ফাইল প্রসেস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়- এমন অভিযোগও জানা গেছে।
এ ব্যাপারে খুলনা ওয়াসার তরুণ বোর্ড সদস্য ইব্রাহিম খলিল, বৃহস্পতিবার সকালে নুসরাত তাবাস্সুমসহ অন্যদের নিয়ে খুলনা ওয়াসা ভবনে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, নতুন এমডি’র সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়েছিলেন। এ সময় খুলনা-১ আসনে এনসিপি’র প্রার্থী অহিদুজ্জামানের নিজ নির্বাচনী এলাকায় ওয়াসার কার্যক্রম এবং এলাকাবাসীর কিছু কথা তুলে ধরেন। এছাড়া খুলনা ওয়াসার নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে কিছু কথা হয়েছে। তবে তদবির বা চাপ সৃস্টির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে কোনো ফ্যাসিস্টকে যদি পুনর্বাসন করা হয়, তাহলে খুলনা ওয়াসাতে ব্যাপক বিক্ষোভ হবে বলে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন। আলোচিত পিডি নিয়োগ নিয়ে খুলনা ওয়াসাতে চলছে গুমোট পরিস্থিতি। যে কোনো সময় ক্ষোভ থেকে বিক্ষোভে রূপ নিতে পারে বলে আশংকা রয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button