সম্পাদকীয়

ভূমিকম্প প্রস্তুতিতে দীর্ঘদিনের শূন্যতা পূরণে এখনই জরুরি উদ্যোগ

বাংলাদেশ ভূমিকম্প-সক্রিয় অঞ্চলে অবস্থিত-এ তথ্য নতুন নয়। কিন্তু এ বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গবেষণা, প্রস্তুতি ও অবকাঠামো উন্নয়ন আজও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, দেশে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের মাত্রা, প্রভাব ও ঝুঁকি নিরূপণে গবেষণার ঘাটতি এতটাই প্রবল যে বড় ধরনের ভূমিকম্প মোকাবিলায় নীতিগত ত্রুটি থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত অপ্রস্তুতি-সবই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতির সাম্প্রতিক বক্তব্যে উঠে এসেছে একটি স্পষ্ট সত্য-ভূমিকম্প সংক্রান্ত মৌলিক তথ্যভা-ার আজও অসম্পূর্ণ। দেশের ভূতাত্ত্বিক গঠন, টেকটোনিক প্লেটের গতিপ্রকৃতি, সক্রিয় ও সুপ্ত ফল্টলাইনগুলো চিহ্নিত না থাকলে ভূমিকম্প ঝুঁকি নিরূপণ কখনোই যথাযথ হতে পারে না। অথচ এসব কাজের জন্য প্রধান প্রতিষ্ঠান ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) বহু বছর ধরে জনবল, যন্ত্রপাতি এবং গবেষণা-সুবিধার ঘাটতিতে ভুগছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক প্রযুক্তি, যোগ্য গবেষক এবং পর্যাপ্ত অর্থায়ন দিয়ে শক্তিশালী করাই এখন জরুরি কর্মসূচি হওয়া উচিত। ঢাকার নগরায়নে ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়ছে। পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের বড় অংশই দুর্বল মাটি, জলাভূমি ভরাট ও নি¤œমানের অবকাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে। ভূমিকম্প সামাল দিতে গেলে এসব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। তবু নির্মাণশৈলী ও বিল্ডিং কোড প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। অবকাঠামো উন্নয়ন যত দ্রুত হচ্ছে, তত দ্রুত বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিত ঝুঁকিও। একই সঙ্গে, গণমাধ্যমে ভুল তথ্য পরিবেশনের অভিযোগও উদ্বেগজনক। ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পের পর বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার মানুষের মধ্যে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক তথ্য প্রদানের জন্য একজন প্রশিক্ষিত মুখপাত্র ও জিএসবির তথ্য-প্রকাশ কাঠামোকে শক্তিশালী করা অপরিহার্য। ভূমিকম্প একটি স্বাভাবিক ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়া-কিন্তু আতঙ্ক নয়, বরং সচেতনতা, প্রস্তুতি ও অনুশীলনই দুর্যোগ মোকাবিলার প্রকৃত হাতিয়ার। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া সুপারিশগুলো তাই যথার্থ ও বাস্তবসম্মত-জাতীয় ভূমিকম্প ঝুঁকির মানচিত্র হালনাগাদ, গবেষণা জোরদার, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তথ্য সমন্বয়, একটি হেল্প ডেস্ক ও টাস্কফোর্স গঠন-এসব পদক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজন হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। এখনই সময় এই শূন্যতা পূরণের। ভূমিকম্প আগাম বার্তা দেয় না; কয়েক সেকেন্ডেই বড় বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। তাই প্রস্তুতির ঘাটতি কোনোভাবেই ক্ষমাযোগ্য নয়। সরকারের জন্য বার্তা স্পষ্ট-গবেষণা ও জরিপ সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন, জনসচেতনতা ও সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়া বড় বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়তেই থাকবে। দেশের মানুষের জীবন ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় ভূমিকম্প প্রস্তুতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার এখনই সময়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button