ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ প্রবেশে নভেম্বরও শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ

প্রবাহ রিপোর্ট : ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশে নভেম্বর মাসেও শীর্ষে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মিশর ও ইরিত্রিয়ার নাগরিকরা। শুধুমাত্র ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ৪ হাজার ১১২ জন অবৈধ অভিবাসী ইতালিতে প্রবেশ করেছেন। গত শুক্রবার প্রকাশিত ইউরোপীয় সীমান্ত ও উপকূলরক্ষী সংস্থা ফ্রন্টেক্সের মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে অবৈধ অভিবাসন ২৫ শতাংশ কমলেও এখন অভিবাসনপ্রবণ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশিদের অবস্থান শীর্ষেই রয়ে গেছে। জানুয়ারি থেকে নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ইউরোপে অবৈধ প্রবেশের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি যে জাতীয়তার মানুষের নাম উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা প্রথম সারিতে। ফ্রন্টেক্স প্রতিবেদনে জানায়, এ ১১ মাসে ইউরোপের বিভিন্ন সীমান্তে মোট ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯০০ জনের অবৈধ প্রবেশ শনাক্ত করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ কম। তবে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপমুখী সমুদ্রপথে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা থামেনি বরং মানবপাচারকারীদের হাত ধরে বিভিন্ন রুটে বাংলাদেশিদের উপস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরীয় রুটে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি। এ রুটেই ইউরোপে মোট অবৈধ প্রবেশের প্রায় ৪০ শতাংশ ঘটেছে। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে এ পথে ৬৩ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ ইউরোপে পৌঁছেছেন। এদের বড় অংশই লিবিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশ থেকে দালালচক্রের সহায়তায় মধ্যপ্রাচ্য বা উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো হয়ে অনেকেই এ পথে ইউরোপে পাড়ি দিচ্ছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় রুটেও বাংলাদেশিদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও এ পথে সামগ্রিকভাবে অবৈধ প্রবেশ ৩০ শতাংশ কমে প্রায় ৪৬ হাজার ২০০ জনে নেমে এসেছে, তবে লিবিয়া থেকে গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের দিকে যাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ। এ করিডোরে চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে অবৈধ অভিবাসন বেড়েছে ২৬০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈধ অভিবাসনের জটিলতা এবং বিদেশে উচ্চ আয়ের স্বপ্ন অনেক তরুণকে অবৈধ পথে ইউরোপমুখী হতে উৎসাহিত করছে। এ সুযোগে সক্রিয় মানবপাচার চক্র। তারা নিরাপদ ও বৈধ পথের আশ্বাস দিয়ে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশের মানুষদের। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ১ হাজার ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, হতাহতদের তালিকায় বাংলাদেশির সংখ্যাও কম নয়। বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন কমার এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির নয়। বরং এটি সতর্কবার্তা। বৈধ অভিবাসনের সুযোগ বাড়ানো, মানবপাচার দমন এবং তরুণদের দেশেই কর্মসংস্থানের পথ তৈরি না হলে ইউরোপের পথে বাংলাদেশিদের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা থামানো কঠিন হবে।



