স্থানীয় সংবাদ

রূপসা সেতুর পূর্ব পাড়ে বালু ব্যবসায়ী তিন আওয়ামী দোসরের কাছে জিম্মি দর্শনার্থীরা

ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর গণস্বাক্ষরিত অভিযোগ
সরকারি রাস্তার ক্ষতি করে চলছে অবৈধ বাণিজ্য
নেতৃত্ব দিচ্ছে আ’লীগের দোসর সাগর

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনার রূপসা খানজাহান আলী (রহঃ) ব্রীজের পূর্ব পাড়ে টোলপ্লাজার দু-পাশে ফ্যাসিস্ট আ’লীগের দোসর ও বালু ব্যবসায়ী সাগর খুলনার প্রভাবশালী এক ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে বুক ফুলিয়ে এখনও পর্যন্ত অবৈধ ভাবে নিয়মনীতি না মেনে এই বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সড়কের অপরপাশে জাবুসার মেহেদী হাসান ও শামিম একইভাবে চালিয়ে যাচ্ছে বালুর ব্যবসা। যার ফলে ব্রীজের দর্শনার্থীদের চরম ভোগান্তি ও সড়কের সরকারি রাস্তার ব্যাপক ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও স্থানীয় প্রশাসন এখনও রহস্যজনক ভূমিকায় রয়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য। এ ঘটনায় রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) খুলনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর গণ স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগটি করেছেন, রূপসা উপজেলার নৈহাটী ইউনিয়নের জাবুসাসহ বিভিন্ন এলাকার সাধারণ জনগণের পক্ষে মো. সিরাজুল ইসলাম। সেই সাথে সরকারি পোস্ট অফিসের ডাক’র মাধ্যমে অনুলিপি প্রদান করেছেন, খুলনার সড়ক ও জনপদ বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, রূপসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও রূপসা থানা অফিসার ইনচার্জ।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, রূপসা খানজাহান আলী (রহঃ) ব্রীজের পূর্ব পাড়ে টোলপ্লাজার দু-পাশে অবৈধ বালুর ব্যবসার কারণে প্রায়ই যানযট ও পথচারী এবং দর্শনার্থীদের চরমভাবে হতে হচ্ছে ভোগান্তির শিকার। এমনকি ব্যক্তি স্বার্থে রূপসা নদী থেকে সড়ক বিভাগের রাস্তা কেটে বালু সরবরাহ পাইপ বসানোও হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিনোদনের অন্যতম জায়গাটি রূপসা সেতু। ফলে এই বালুর ব্যবসার কারনে বিনোদনের জন্য এই ব্রীজে বেড়াতে আসা হাজারও দর্শনার্থীদের সমাগমের সৃষ্টি হয়। তখন তাদেরও পোহাতে হয় দুর্ভোগ। এতে করে সরকারি রাস্তার যেমন ক্ষতি, তেমনই পথচারীদের প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি। এ সড়কটির দু-পাশে বালুর রমরমা অবৈধ বাণিজ্য করছেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের দোসর সাগর শেখ এবং জাবুসার মেহেদী হাসান ও শামিমসহ স্থানীয় তিন ব্যক্তি।
সাগর শেখ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন থেকে এখনও পর্যন্ত বহাল তবিয়তে এ সড়কটির পাশে করছে বালুর ব্যবসা। এ বালুর ব্যবসার কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি মানুষের রয়েছে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি। এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিতে পরিনত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এদিকে, রূপসা ব্রীজটি বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) এর সীমানার ভিতরে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকার নিয়ম না থাকলেও সেখানে অনিয়ম তান্ত্রিক ভাবে ব্রীজের সিমানার ভিতরে এ বালুর অবৈধ বাণিজ্য। (কেপিআই) কর্তৃপক্ষের নিকট ব্রীজটিকে রক্ষা করতে সিমানা প্রাচীর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা।
এর আগে এ বছরের ২৮ জানুয়ারি সেতু রক্ষা বাঁধ, পরিবেশ দূষণ ও সরকারি রাস্তা ভাঙার অভিযোগে আইনি পদক্ষেপ নিতে বালু ব্যবসায়ী শামিমের হাতে হ্যান্ডকাপ দেয় পুলিশ। কিন্তু শামিম ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে ওই সময় পুলিশের হাত থেকে মুচলেকা দিয়ে রক্ষা পেয়ে যায়।
একই অভিযোগে পরবর্তীতে বালুর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করে। পরে রূপসা উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নৈহাটী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব মো. আবু সাঈদ ঘটনাস্থলে এসে বালু সরবরাহ বন্ধ করে দেন। পরে পুনরায় পাইপের মাধ্যমে বালু সরবরাহ করতে গেলে থানা পুলিশ তাও বন্ধ করে দেন।
বর্তমানে খুলনার এক বপ্রভাবশালীর নাম ভাঙিয়ে বালুর ব্যবসা করে যাচ্ছে সাগর। সেই প্রভাবশালী ব্যক্তির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পর্যন্ত পাইনা। যেকারণে বালু ব্যবসায়ী সাগর বুক ফুলিয়ে প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে অবৈধ ভাবে নিয়মনীতি না মেনে এই বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ৫ আগষ্টের পর জাবুসার শামিম ও মেহেদী একইভাবে করছে বালুর ব্যবসা।
মেইন সড়কের দু-পাশে বালু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রেহাই পেতে প্রতিকারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী, সাধারণ পথচারী ও দর্শনার্থীরা।
পরিবেশ দূষণ, সরকারী রাস্তা দখল ও সরকারের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ব্রীজ রক্ষার স্বার্থে অবৈধ বালুর ব্যবসা বন্ধ করতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে উচ্ছেদ অভিযানের দাবি ভুক্তভোগীদের।
এ বিষয়ে খুলনার জেলা প্রশাসক আ. স. ম. জামশেদ খোন্দকার বলেন, পরিবেশ, সড়ক ও মানুষের ক্ষতি করে কোন ভাবেই বালুর ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button