কর সন্ত্রাস বন্ধ করা জরুরি

দীর্ঘদিন থেকে দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা চলমান। নতুন করে ব্যাংক খাতে ঋণের সুদহার এখন প্রায় ১৫ শতাংশ। এত সুদহার দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা ব্যবসায়ীদের পক্ষে অসম্ভব। এ ছাড়া লাভ হোক কিংবা লোকসান, ব্যবসায়ীদের জন্য অগ্রিম আয়কর বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি এক বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে নতুন বিনিয়োগে সাহস করছেন না কেউ। একই সাথে অনির্বাচিত সরকারের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করছে। এর সঙ্গে আরো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সঙ্কট, আমদানি জটিলতা এবং অর্থনৈতিক নীতির অনিশ্চয়তা। ফলে সরকার ও বেসরকারি খাত নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ প্রবাহ এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। সরকারি পরিসংখ্যানে বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবি করলেও বাস্তব মাঠপর্যায়ে সেই প্রবাহে রয়েছে বড় ধরনের স্থবিরতা। বর্তমানে এমন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, লোকসান দিলেও ব্যবসায়ীদের কর দিতে হচ্ছে। লোকসান বেশি দিয়েও কর দেয়া থেকে রেহাই পাচ্ছে না। অর্থাৎ আয় না থাকলেও কর দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া গতি কি! ব্যাংকের যে উচ্চ সুদহার, এ হারে ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালানো বা নতুন ব্যবসা শুরু করা অসম্ভব। অন্যদিকে, ট্যাক্স আদায়ে এনবিআর সংশ্লিষ্ট এলাকায় তার নিয়োজিত শাখাগুলোকে ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে থাকে। এ লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসায়ীদেরকে তারা অনেকটা দৌড়ের উপর রাখে। ব্যবসা না হলেও ব্যবসায়ীদের ট্যাক্স দিতে হবে। টার্গেট পূরণ করতে গিয়ে ট্যাক্স আদায়কারী শাখার কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা থাকে বিপাকে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও উন্নত থাকলে কোনো সমস্যা হয় না। এটা সরকারের চরম ব্যর্থতা। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি গার্মেন্ট, শ্রমবাজার, আবাসন খাত চরম দুর্দশার মধ্যে। অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের এসব খাত সংকুচিত হয়ে গেছে। আবাসন খাত তো পুরোপুরি স্থবির হয়ে গেছে। এ খাতের ব্যবসায়ীদের হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের বিভিন্ন শিল্পকারখানায়ও উৎপাদন কমে গেছে। রড, সিমেন্ট, ইট, বালু ইত্যাদি নির্মাণ শিল্পও স্থবির হয়ে পড়েছে। কৃষি খাতে কৃষকের উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারের ‘কর সন্ত্রাস’ পরিস্থিতি নাজুক করে ফেলেছে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ কমাতে লোকবল ছাঁটাই করছে। এতে লাখ লাখ লোক বেকার হয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগ বলতে কিছু নেই। ব্যাংকের উচ্চ সুদহার ও ‘কর সন্ত্রাস’-এর কাছে ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে তারা কীভাবে ট্যাক্স দেবে? আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক কাবুলিওয়ালার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। অনেক দেশ এখন আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক-এর ঋণের ফাঁদ থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়, এ পথ ও প্রক্রিয়া খুঁজছে। যত কম সম্ভব সংস্থাগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে তাদের খবরদারি থেকে বের হওয়ার জন্য নিজেরাই স্বাবলম্বী হওয়ার নীতি নিয়ে চলছে। বাংলাদেশকেও এ নীতি অবলম্বন করা ছাড়া বিকল্প নেই।
