ভালো সড়কে অপ্রয়োজনীয় সংস্কার: উন্নয়ন নাকি অপচয়ের প্রতিচ্ছবি

বগুড়া শহরের তিনমাথা রেলগেট থেকে সাতমাথা পর্যন্ত সড়কের সাম্প্রতিক কার্পেটিং কাজ উন্নয়ন কার্যক্রমের গুণগত মান ও জবাবদিহি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। যে সড়কে বড় ধরনের ভাঙন বা কাঠামোগত ক্ষতি দৃশ্যমান ছিল না, সেখানে প্রায় তিন কোটি টাকার সংস্কার কাজ কতটা প্রয়োজনীয় ছিল-এই প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। তার চেয়েও উদ্বেগজনক হলো, কাজ শুরুর এক সপ্তাহ না যেতেই পাথর উঠে যাওয়ার ঘটনা, যা প্রকল্পের কারিগরি মান নিয়ে সন্দেহ আরও গভীর করেছে।
ডাবল বিটুমিনাস সারফেস ট্রিটমেন্ট (ডিবিএসটি) পদ্ধতিতে কাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মানদ- রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সীমিত পরিমাণ পাথর উঠে যাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে বিভিন্ন অংশে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পাথর উঠে গেছে। এতে বোঝা যায়, পাথরের সাইজ নির্বাচন, বিটুমিনের গ্রেড এবং প্রয়োগ পদ্ধতিতে গুরুতর ত্রুটি ছিল। নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহারের অভিযোগ সত্য হলে তা সরাসরি কাজের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কাজের সময় ও পদ্ধতি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে কাজ করা হয়েছে। জনস্বার্থে করা প্রকল্প যদি এমন গোপনীয়তা ও তাড়াহুড়োর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়, তবে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ তৈরি হয়। পরে সমালোচনা শুরু হলে কিছু অংশে অতিরিক্ত লেয়ার দেওয়া হচ্ছে-এটি সমস্যা সমাধানের চেয়ে বরং দায় এড়ানোর কৌশল বলেই মনে করছেন অনেকেই। সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি অবশ্য প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে। সীমিত সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে শহরের অন্যান্য সড়কে বড় গর্ত ও ভাঙনের কারণে মানুষ নিয়মিত ভোগান্তিতে পড়ছে, সেখানে তুলনামূলক ভালো সড়কে নতুন করে কোটিং দেওয়া কতটা যুক্তিসংগত-তা খতিয়ে দেখা জরুরি। উন্নয়ন যদি বাস্তব প্রয়োজনের বদলে কাগুজে পরিকল্পনা বা অন্য উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়, তবে সেটি জনস্বার্থ রক্ষা করে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লাইসেন্স ভাড়া ও মাঠপর্যায়ে ভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে কাজ করানোর অভিযোগ। সরকারি ক্রয়বিধি অনুযায়ী, এসব অনিয়ম গুরুতর অপরাধের শামিল। অতীতে কালো তালিকাভুক্তির অভিযোগ, চলমান দুর্নীতি তদন্ত-সব মিলিয়ে প্রকল্পটির বিশ^াসযোগ্যতা আরও ক্ষুণœ হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নীরবতা কিংবা অস্পষ্ট বক্তব্যও পরিস্থিতি স্বচ্ছ করছে না। জনস্বার্থে বাস্তবায়িত প্রতিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে মান, প্রয়োজনীয়তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। ভালো সড়কে অপ্রয়োজনীয় সংস্কার এবং ত্রুটিপূর্ণ বাস্তবায়ন-দুটোই উন্নয়ন নয়, বরং সীমিত সম্পদের অপচয়। এখন প্রয়োজন নিরপেক্ষ তদন্ত, দায় নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে এমন প্রকল্প বাছাই ও বাস্তবায়নে কঠোর জবাবদিহি।
