সম্পাদকীয়

ফুটপাত হোক পথচারীর

রাজধানীর প্রায় প্রতিটি প্রধান সড়কের পাশে ফুটপাত এখন হকার, দোকানদার এবং নানা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর দখলে চলে গেছে। কোথাও সাময়িকভাবে, আবার কোথাও দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী দোকান হিসেবেও গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। গুলিস্তান, পল্টন, নিউমার্কেট, মিরপুর, মতিঝিল কিংবা ফার্মগেট যে এলাকাই ধরি না কেন, ফুটপাত এখন পথচারীর নয়, বরং ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এমনকি এমন কিছু স্থান রয়েছে যেখানে রিক্সাও ফুটপাতের ওপর দিয়ে চলে, অথচ একজন সাধারণ মানুষ তার দুই পা ফেলার জন্য জায়গা খুঁজে পায় না। ফুটপাত দখলের এই চিত্র শুধু নাগরিক ভোগান্তির প্রতীক নয়, এটি এক ধরনের নাগরিক অধিকারের হরণও বটে। একজন পথচারী যে নিরাপদে, নির্বিঘেœ হাঁটবেন- তা যেন আজ একটি বিলাসিতার নামান্তর। বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ বা শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের জন্য এই পরিস্থিতি রীতিমতো ভয়াবহ। অনেক সময় তাদের বাধ্য হয়ে গাড়ির চলাচলের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়, আর এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ছে। মানুষেরও কোনো প্রতিবাদ নেই যে কেন ফুটপাতে অবৈধ দোকান দিয়েছে। মানুষও এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে নিজের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে চলাফেরা করছে। ৩০ সেকেন্ডের জন্য রাস্তায় নামলেও বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নগর কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে কিছু অভিযান চালায়। হকারদের উচ্ছেদ করা হয়, দোকান সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু এসব পদক্ষেপ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অস্থায়ী ও লোকদেখানো। কারণ কয়েক দিনের মধ্যেই একই জায়গায় আবার বসে যায় সেই পুরনো দোকান, ফেরত আসে হকাররা। এটি যেন এক চক্রাকার প্রক্রিয়া যেখানে উচ্ছেদ, দখল, পুনরায় উচ্ছেদ চলতেই থাকে। এই পরিস্থিতির জন্য এককভাবে হকারদের দায়ী করাও যুক্তিযুক্ত নয়। ঢাকার মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ, কর্মসংস্থান সংকটময় শহরে বহু মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে ফুটপাতে বসে। এই অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা। তাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দরকার। কিন্তু সেই মানবিকতা যেন অন্যের অধিকার হরণ না করে- এ বিষয়েও আমাদের সংবেদনশীল হতে হবে। সুতরাং এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন বাস্তবসম্মত ও সমন্বিত পরিকল্পনা। একদিকে যেমন হকারদের জন্য নির্দিষ্ট বিকল্প স্থান নির্ধারণ করতে হবে, তেমনি প্রয়োজন সময়ভিত্তিক বাজার ব্যবস্থাপনা (যেমন সন্ধ্যার পর নির্দিষ্ট স্থানে বসতে দেওয়া), কঠোর আইনি ব্যবস্থাপনা এবং পর্যাপ্ত নজরদারি। সরকারের দায়িত্ব আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করা। ফুটপাত ব্যবস্থাপনায় উচিত সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যেন হকারদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ও বৈধ লাইসেন্স ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়। এছাড়া নাগরিক সচেতনতাও জরুরি।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button