বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেট ধ্বংস হয়ে গেছে: খসরু

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেট ধ্বংস হয়ে গেছে উল্লেখ করে সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যত উন্নত দেশ দেখবেন ক্যাপিটাল মার্কেটের সাথে দেশের গ্রোথ, ডেভেলপমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট সরাসরি জড়িত। আমেরিকার মার্কেট ক্যাপিটাল জিডিপির দ্বিগুণ। ভারতের মার্কেট ক্যাপিটাল জিডিপির ৬০-৭০ শতাংশ। বাংলাদেশের মার্কেট ক্যাপিটাল জিডিপির ৪-৫ শতাংশ। আমি সারপ্রাইজড এত ছোট ক্যাপিটাল মার্কেট দিয়ে আমরা যতটুকু করতে পেরেছি। কিন্তু ক্ষতি হয়েছে। ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপ ছাড়া আমরা যে ধরনের ইকোনমির কথা বলছি, যে জায়গায় যেতে চাইছি সেখানে যেতে পারব না। গতকাল সোমবার রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউর মেজবান হলে ‘বাণিজ্য সংলাপ’ অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবসায়ী ফোরাম এ সংলাপের আয়োজন করে। আমীর খসরু বলেন, এ জন্য আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটের কাজ শুরু করেছি। আমরা গ্লোবাল ফান্ড ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলছি। রেগুলেশন, প্রডাক্টগুলো দেখছি। বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেট ফ্রন্টিয়ার, অর্থাৎ একদম নিচে। আমরা যদি ইমার্জিং মার্কেটে ঢুকতে পারি, সারা দুনিয়া ফান্ড নিয়ে বসে আছে। বাংলাদেশি অরজিন অনেক ফান্ড ম্যানেজার একেকজন ১৫ বিলিয়ন, ৩০ বিলিয়ন ডলার অলরেডি ম্যানেজ করছে। তারা চীনে বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করছে কল সেন্টারে। ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ছাড়া ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি আমরা করতে পারব না। ক্যাপিটাল মার্কেট বোঝে এমন লোকজন জয়েন করবে। বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিসিএল, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, বিডা এগুলোতে আমাদের স্পেশালাইজড লোকজনকে হাই পে দিয়ে আনতে হবে। আপনি এক লাখ টাকা বেতন দিয়ে বিএসইসি চালানোর লোক পাবেন না। তাকে তার পে দিতে হবে। গভর্নরকে ওইভাবে পে করতে হবে। আমি গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, বিএনপি সরকার কখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পলিটিক্যাল নিয়োগ দেয়নি। এ জন্য বিএনপির সময় স্টক মার্কেট কলাপস করেনি, স্ক্যান্ডেল হয়নি। ব্যাংকিং সেক্টর আমাদের সময় সাফার করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের জবাবদিহি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে আমীর খসরু বলেন, জবাবদিহি অনুপস্থিত। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের নির্দেশে কাজ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর অফিস বলেছে, অর্থমন্ত্রী বলেছে, ক্ষমতাধর কোনো নেতা বলেছে। গভর্নর অটোনোমাস বডি হিসেবে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বডি হিসেবে কাজ করেনি। আমরা চাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠান রান করুক ইন্ডিপেন্ডেন্টলি, ননপলিটিক্যালি, প্রফেশনালি। তাহলে সবাই জবাবদিহির মধ্যে আসবে। গত ১৫-১৭ বছরে বাংলাদেশে যে সমস্যাগুলো হয়েছে তা হওয়ার কারণ নেই তো যদি বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করত। আইন মেনে চলতে হবে। ক্যাশ টাকা বিদেশে পাঠানোর সুযোগ এটা থাকার কোনো কারণ ছিল না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ইনস্টিটিউশনগুলো দায়বদ্ধ ছিল না। স্বচ্ছতার অভাবে আমরা গর্তে পড়েছি। সব প্রতিষ্ঠানকে চলতে দিতে হবে। পলিটিক্যাল ডিসিশনে তো সেন্ট্রাল ব্যাংক চলবে না। আজ ব্যাংকিং সেক্টরে টাকা নেই। কোনো সরকার তো দেশ চালায় না, দেশ চালায় প্রতিষ্ঠানগুলো। এক প্রশ্নের উত্তরে আমীর খসরু বলেন, মীরসরাই ইকোনমিক জোনে অথরিটি আছে। শর্ত পূরণ না করলে বরাদ্দ বাতিল হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমদ। সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে ৮০ কিলোমিটার কর্ডলাইন দরকার। চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ দিয়ে ১০ লেইনের মহাসড়ক দরকার। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সব কেপিআই, জ্বালানি তেলের ডিপো। তাই রিলোকেটেড করতে হবে। মাতারবাড়ীতে ১১ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট। এটা দিয়ে ইউরোপে জাহাজ পাঠানো যাবে কিনা চিন্তা করতে হবে। ডিপ সী পোর্ট কোথায় করবেন? সোনাদিয়ার কথা বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ সালাম বলেন, আমি জানি বিএনপির ৩১ দফা আছে। অনুরোধ করব, বিজনেস যে করে তাকে বিজনেস কমিউনিটির লিডার বানান। বন্দর ডেভেলপ করতে হবে। দয়া করে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ দিন। প্যাসিফিক জিন্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, এসএমই খাতে ৮০ লাখ উদ্যোক্তা। আড়াই কোটি প্রত্যক্ষ পরোক্ষ কর্মী। তাই এ খাতে সরকারের নজরদারি দরকার। বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরএমজি খাতের এসএমইর জন্য ইপিজেডের জায়গা বরাদ্দ দিতে হবে। পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইকেল ইন্ডাস্ট্রির এমডি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে নানা অনুমোদন আনতে হয়রানি ও সময়ক্ষেপণ হয়। আমরা বছরে ৪০০ জাহাজ আনি রিসাইকেলের জন্য। একই ডকুমেন্টে শিল্প মন্ত্রণালয় যে জাহাজ কাটার অনুমোদন ২-৭ দিনে দিচ্ছে পরিবেশ তা ২ মাস সময় নিচ্ছে। টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, আমরা আশা করি নির্বাচিত সরকার আসলে ব্যবসায়ীদের দুঃখ দুর হবে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন চাই। বক্তব্য দেন বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শহিদ উল্লাহ, উইম্যান চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুলতানা নূরজাহান রোজী, রাঙামাটি চেম্বার সভাপতি মো. মামুনুর রশীদ, বারভিডার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট হাবিবুর রহমান, বান্দরবান চেম্বারের নির্বাহী সদস্য জসিম উদ্দিন, আন্তঃজেলা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন, খাতুনগঞ্জ ট্রেড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মীর আবদুস সালাম, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলী, মাস্টার আবুল কাশেম, বিএনও লুব্রিকেন্টসের পরিচালক সালাউদ্দিন ইউসুফ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি সরোয়ার জামাল নিজাম ও আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম, সংলাপের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা হাফেজ এহসানুল হক। এরপর ছিল বাঁশির সুরে জাতীয় সংগীত।



