স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় শ্রমিক শক্তি নেতা মোতালেবকে গুলির নেপথ্যে…

আলোচনায় নারী-মাদক

স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র শ্রমিক সংগঠন জাতীয় নগরিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় আহবায়ক মো: মোতালেব শিকদারকে গুলির নেপথ্যে নারী এবং মাদক সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে নেশার নানা সামগ্রী। ফলে ব্যক্তিগত অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরেই তাকে গুলি করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
এর আগে রোববার বেলা পৌণে ১২টার দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল আকসা মসজিদ স্মরণীর ১০৯ নং রোডের ‘মুক্তা হাউজ’র নীচ তলার একটি কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন মোতালেব। তিনি পেশায় ট্রাক চালক ছিলেন। তিনি খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানার শেখ পাড়া পল্লী মঙ্গল স্কুল এলাকার মৃত মুসলিম শিকদারের ছেলে।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে তিনি তিনতলা ভবনের ওই বাড়ির নীচ তলার একটি কক্ষে অবস্থান করেন। রাতে সেখানে মোতালেব শিকদারের সহযোগীরা ইয়াবা সেবন, মদ্যপান এবং মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করেন। নিজেদের মধ্যে মত বিরোধের করণে সহযোগীরা কেউ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি রিক্সাযোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়। ঘটনার পর থেকে ওই ফ্লাটের ভাড়াটিয় তন্বি-মিরাজ দম্পত্তির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
কেএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মাদ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘটনার সত্যতা যাচাই কারার জন্য ঘটনাস্থলে আসি। পরে তার প্রাইভেট কার পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। পরে একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করি। যেখানে দেখা যায়, শনিবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ভিকটিমসহ আরও দুইজন এ বাড়িতে আসে। সে অনুযায়ী মুক্তা হাউজের ওই কক্ষ থেকে আমরা মাদকের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করি। এখানে মেয়েদের নিয়ে আসা হতো।
তিনি দাবি করেন, শনিবার রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিল এবং এখানে বিভিন্ন ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপ করেছে। তদের নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। যেটা আমরা প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছি। এর সাথে আরও অনেকেই জড়িত আছে। জড়িতদের খুব শিগগিরই আইনের আওতায় আনতে পারবো। গুলিটি মাথার চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। মোতালেব এখন শঙ্কামুক্ত।
মজিদ স্মরণীর রোডের মুক্তা হাউজের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার বলেন, তন্বী নামে এক তরুনী একমাস আগে নীচের ফ্লোরটি ভাড়া নেয়। সে নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকত। তার কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যান্যদের মাধ্যমে তার অসামাজিক কার্যকালাপের বিষয়টি জানতে পেরে এ মাসে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ প্রদান করি। কিন্তু বাড়ির ছাড়ার আগেই এ ঘটনাটি ঘটেছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হারুন অর রশিদ বলেন, গুলিটি তার বাম কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। খুলনা সিটি ইমেজিং সেন্টার তার মাথার স্ক্যান করা হয়েছে। সেখানে গুলির কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আহত মোতালেব মিয়া এখন শঙ্কা মুক্ত।
এদিকে, ছেলের ওপর গুলির ঘটনা জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে যান মোতালেবের মা রাবেয়া বেগম, তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তার ও তিন বছরের কণ্যা সন্তান। সেখানে তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় তার সাথে সর্বশেষ মোবাইলে কথা হয়। মোতালেব তাদেরকে জানায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের একজন কর্মী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার সার্বিক খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছি। এরপর ডাক বাংলো মোড়ে স্যান্ডেল কেনার জন্য যাব। এ কথা বলে মোতালেব ফোন কেটে দেয়। রাতে আর কোন কথা হয়নি তার সাথে। বেলা ১১ টার দিকে একজন ফোন করে জানায় তাকে গুলি করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ দেওয়ার কারণে প্রতিপক্ষ তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ করেন তারা।
এনসিপি’র খুলনা মহানগর সংগঠক আহম্মেদ হামীম রাহাত বলেন, সোনাডাঙ্গা এলাকায় মোতালেব সিকদারকে গুলি করা হয়েছে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, খুলনা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এই সবগুলো সন্ত্রাসী গ্রুপই আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট। নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী নেতাদের মদদেই সন্ত্রাসীরা খুলনাকে অশান্ত করার মিশনে নেমেছে। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে জাতীয় নাগরিক পার্টির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মাহমুদুল হাসান ফয়জুল্লাহ বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদি পরাজিত শক্তি ছাড়া নাগরিক পার্টির কোন শত্রু নেই। ধারণা করা হচ্ছে, আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টির জন্য তারাই শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদারকে হত্যার উদ্দেশ্য গুলি করেছে। বিষয়টি আরো বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে গুলিবিদ্ধ মোতালেব আগে শ্রমিক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি এনসিপি’র শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির সাথে যুক্ত হন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button