পাহাড় কাটা বন্ধ করতেই হবে

বাংলাদেশে প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে দেখা যায় পাহাড়ধসের ঘটনা। পাহাড়ধসের কারণে বিলীন হয় অসংখ্য ঘরবাড়ি। ভারী বর্ষণ শুরু হলেই পাহাড়ধসের আতঙ্ক দেখা যায়। শুধু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয় না, অসংখ্য প্রাণহানিও ঘটে। এসবের পরও মানুষ একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য এখানে ঘরবাড়ি বানায়। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাহাড় কাটার খবর বেশি পাওয়া যায়। পাহাড় কাটা হয় মূলত মাটি লুট করার জন্য। এ ছাড়া সমতল ভূমি তৈরি করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়। পাহাড় কেটে প্লটও তৈরি করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড় ও টিলা কাটার যে ভয়াবহ চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, তা কেবল পরিবেশগত উদ্বেগ নয়, বরং একটি আসন্ন বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এবং প্রশাসনের একাংশের নির্লিপ্ততায় যেভাবে রাতের আঁধারে টিলা সাবাড় করা হচ্ছে, তা দেশের প্রচলিত আইন ও পরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। পাহাড় কাটার ফলে মাটির অণুজীব ধ্বংস হয়ে যায়। পাহাড়ের ওপর যে উদ্ভিদ প্রজাতি, তার অধিকাংশ হারিয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য। পাহাড় কাটার ফলে শুধু পাহাড়ধসই হয় না, এর ফলে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পরিবেশদূষণ, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, ভূমি ক্ষয়ের ঘটনা ঘটে। পাহাড়খেকোদের বেপরোয়া কর্মকা-ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে পাহাড়খেকোরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো সাবাড় হওয়ার শঙ্কা দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। জানা গেছে, পাহাড় বেষ্টিত চট্টগ্রামে একশ্রেণির প্রভাবশালী রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে বসতবাড়ি করছে। জলাশয় ভরাট এবং পাহাড় কাটা রোধে সংশ্লিষ্ট সকল ডিপার্টমেন্টকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাহাড় ও টিলা কাটার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা। একই সঙ্গে পাহাড়ের তালিকা প্রস্তুত করে পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নিতে বলেছেন। স্থানীয় প্রশাসন এটি করতে সক্ষম হলে প্রতিবছর মানুষের আর পাহাড় ধসের কারণে মৃত্যুর মুখে পড়তে হবে না। পাহাড়ের জীববৈচিত্র্যও ধীরে ধীরে প্রস্ফুটিত হবে। পাহাড় ধসে মানুষের মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে পাহাড়গুলো দখলমুক্ত করতে হবে। ন্যাড়া পাহাড়ের ওপর গাছ লাগাতে হবে। কোনোভাবেই যেন কেউ সেসব জায়গায় বসতি গড়তে না পারে সে জন্য স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাস্তুহারা মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আগে করতে হবে।
