রূপসায় জামায়াত করায় নিরীহ ব্যক্তিকে নির্যাতন ও গ্রেফতারের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

জড়িত ওসি মাহফুজ, এসআই জাহাঙ্গীর, এসআই নাজমুল ও এএসআই মিলন
স্টাফ রিপোর্টার : রূপসা থানার সদ্য বদলিকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকরর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, রূপসা উপজেলার নৈহাটী ইউনিয়নের রামনগর এলাকার আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফার (৭০) নামে কোন ফৌজদারী, দেওয়ানী বা রাজনৈতিক মামলা হয়নি এবং কোনদিন হাতে হাত কড়াও পড়েনি। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী করার কারণে এ বছরের ২৫ মে শুক্রবার বিকেল ৫ টায় রূপসা থানার কিসমত খুলনা ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম ও এএসআই মিলন হোসেন সিভিল পোষাকে বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করে কমান্ডো স্টাইলে দরজা খুলতে বলে। তখন দরজা খুলতে দেরি হলে লাথি মেরে মাদকাসক্ত মিলন হোসেন ঘরের দরজার লক ভেঙ্গে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। চোর না ডাকাত কোন কিছুই বোঝার আগেই ‘থানায় চলেন আপনার নামে ওয়ারেন্ট রয়েছে’ বলেই হাত কড়া পরায়। হাত কড়ার চাপে গোলাম মোস্তফা প্রচন্ড ব্যাথায় কাতরাতে থাকেন। ওই সময় তার দুই জমজ মেয়ে তানিয়া ও সানিয়া বের হয়ে তাদের অনুরোধ করে বলে আপনারা হাতকড়া খুলে দেন। তার হার্টে রিং পরানো এবং অসুস্থ্য। এভাবে টানা হেচড়া করলে হার্ট এ্যাটাক করতে পারে। আপনারা বসেন, ওয়ারেন্ট দেখান, ওয়ারেন্ট থাকলে নিয়ে যান। তিনি তো চোর, ডাকাত বা সন্ত্রাসী নন। তখন মিলন হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে বলে সে পলাতক আসামী। তার নামে চেক ডিজঅনারের ১৩৮ ধারার মামলা রয়েছে।
একপর্যায়ে তিনি বলেন আপনাদের ভুল হচ্ছে। চেকের মামলা আমার ছোট ভাই মোস্তফার নামে। আমার নাম গোলাম মোস্তফা। ওরা বললো সেটা প্রমান হবে থানায়। এই বলে আবার হ্যান্ডকাপ ধরে টেনে হিচড়ে রাস্তায় নিয়ে যায়। যার ফলে হ্যান্ডকাপ আরও টাইট হয়ে যায় এবং আমার বাম হাতের কব্জির জয়েন্ট সরে যায়। তখন শোরগোল শুনে আশ পাশের লোকজন রাস্তায় জড়ো হয়। তারা দারোগা মিলন হোসেনকে তার হাত কড়া খুলে দিতে বলেন। তখন জনগনের সাথে কথাকাটাকাটি এবং হ্যান্ডকাপ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। তাতে মিলনের হাতের নখে খোচা লাগে এবং আঙ্গুলে ব্যাথা পেয়ে হ্যান্ডকাপ খুলে দিয়ে থানায় চলে যায়। থানায় গিয়ে দারোগা নিজের দোষ ঢাকতে মোস্তফার পরিবারের নামে পুলিশকে হাতে কামড় দিয়ে আসামী ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছে বলে ওসি মাহফুজের কাছে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করে অপপ্রচার চালানো হয়। কিন্তু ওসি কোন যাচাই বাছাই না করে দারোগা মিলনের কথামত একতরফা তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে দুই মেয়ে, স্ত্রী, ভাই ও জামাতাসহ ৬ জনের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দুইদিন পরে আদালতে হাজির হলে বিজ্ঞ আদালত জামিন মঞ্জুর করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও অভিযোগ করেন, মোস্তফার ভাগ্নে ব্র্যাক এনজিও থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিল। তখন ওই টাকার একজন জামিনদার ছিলেন। কিন্তু সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ না হওয়ায় এনজিও’র নামে মামলা করে যেটা অত্র মামলায় ওয়ারেন্ট রয়েছে তিনি জ্ঞাত ছিলেন না। উক্ত মামলার পরের দিন আদালতে হাজির হয়ে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে। ১১ নভেম্বর খুলনা আদালতে ৯১/২৫নং মামলায় জামিনে জন্য হাজির হলে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনের ম্যাসেস রূপসা থানার ওসি মাহফুজ পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ পাঠিয়ে আদালত চত্ত্বর থেকে তাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে। গোলাম মোস্তফার আইনজীবী ফাতেমা আদালত চত্ত্বর থেকে গ্রেফতারের কারণ জিজ্ঞাসা করলে রূপসা থানার ওসির নির্দেশ রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। পরে রূপসা থানায় তাকে নিয়ে গিয়ে মামলার তদন্ত অফিসার এস,আই নাজমুল তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ করে। তার উপর সারা রাত চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। এমনকি পকেটে থাকা ৭০ হাজার টাকা, মোবাইল ও জরুরী কিছু কাগজপত্র তল্লাশী করে এসআই নাজমুল নিয়ে যায়। এক রাত একদিন কিছুই খেতে পর্যন্ত দেয়নি। মোবাইলটি ফেরৎ দিলেও টাকা ও কাগজপত্র এখনও ফেরৎ পাইনি। পরের দিন ১২ নভেম্বর তাকে হাতকড়া পরিয়ে দঁড়ি দিয়ে বেধে রামনগর গ্রাম প্রদক্ষিণ করে রূপসা বাজারের মধ্য দিয়ে হাটিয়ে খুলনার কোর্টে নিয়ে যায়। জামিন নেওয়া রি-কল জমা দেওয়া মামলা যার নং-৬২৯/১৮ এবং আমার ছোট ভাই মোস্তফা মামলা নং-৯৭৭/২৩ মামলায় আমাকে কোর্টে চালান দেয়। ৮ দিন কারাগারে থাকার পর আদালত উক্ত দুই মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করেন, ওসি মাহফুজ রূপসা থানায় আসার পর অত্র থানায় কোন আওয়ামীলীগের নেতা বা মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার করেনি। মিলন দারোগাকে মাদক ব্যবসায়ীদের মোটর সাইকেলে চলাফেরা করতে দেখা যায়। মিলন দারোগা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক মাসোয়ারা নিয়ে সকলে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। যার প্রমাণ রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী নিহত মানিক এর মটর সাইকেলের পিছনে এস আই নাজমুলকে প্রায়ই দেখা যেত। আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাদের কথায় তাকে গ্রেফতার করে। কারণ তিনি রূপসা উপজেলা জামায়াতের সাবেক রাজনৈতিক সেক্রেটারি ও বাসস্ট্যান্ড ইউনিটের সভাপতি। এই ওসি মাহফুজের বিরুদ্ধে মাফিয়া ডন শামীম ওসমানের সহযোগী ছিলেন এবং বহু নিরীহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের দমন নিপীড়ন করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি জুলাই আন্দোলন দমনে সে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ভুক্তভোগী এই দুর্নীতিবাজ ওসি কর্তৃক ন্যাককার জনক ঘটনাটি’র ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।



