বায়ুদূষণে ঝুঁকি বাড়ছে, সমাধানের পথ বের করুন

যান্ত্রিক যুগের কারণে বাস, ট্রাক, ট্রাক্টর, স্যালো ইঞ্জিনবাহিত যানবাহন এমনকি ফিটনেসবিহীন গাড়ীর কালো ধোঁয়ার আগ্রাসনে বায়ুদূষণের মাত্রা অতীতের চেয়ে হাজার গুণ বেড়ে গেছে। এ কারণে বায়ুদূষণ এখন সকল শ্রেণির মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুকনো মৌসুমে বাতাসে ধুলা বেশি থাকে। কিন্তু শহর এলাকায় পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে মনুষ্যসৃষ্ট কারণে। যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বড় বড় নির্মাণ কাজ চলায় সর্বত্রই এখন ধুলা। দেশের উন্নয়নে রাস্তাঘাট, ভবন নির্মাণ, নগরায়ন, করতে হলে ইট ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য পুরোনো ও অপরিকল্পিত ইটভাটাগুলোর বদলে সরকার অনুমোদিত পরিবেশ বান্ধব জিগজাগ পদ্ধতির ইটভাটায় ইট পোড়ানো, শহরের ভিতরে রাস্তা খোড়াখুড়ির পর পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া এবং সিমেন্টের বর্জ্যদুষণ রোধে ঢেকে রেখে কাজ করলে ধুলিদুষণ অনেকাংশে কম হত। গবেষকরা বলছেন, মাত্র ১০ মাইক্রন আয়তনের ক্ষুদ্র কণা সহজে ফুসফুসের অভ্যন্তরে ঢুকতে পারে। অথচ স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি এমন অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, যাদের আয়তন প্রায় আড়াই মাইক্রনের সমান। আর আড়াই মাইক্রন আয়তনের একটি কনা খুব সহজেই মানুষের ফুসফুস ভেদ করে রক্ত প্রবাহে মিশে যেতে পারে। বিশ্বের যেসব দেশের বায়ু ভয়াবহ দূষণের শিকার, বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। নদ-নদী ও সবুজের সমারোহে ভরা দেশের এই বৈসাদৃশ্য নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। বায়ুদূষণের কারণে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির পাশাপাশি প্রতিবছর আঞ্চলিক জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। দূষিত বাতাস কেবল মানুষকে অসুস্থ করছে না, বরং দারিদ্র্য হ্রাস, উৎপাদনশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের পথও সংকুচিত করছে। রাজধানী ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহরের তালিকায় অবস্থান করছে। এর অন্যতম কারণ হলো- শিল্প-কারখানার কালো ধোঁয়া, পুরনো ও অদক্ষ যানবাহন, ইটভাটা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, চলমান মেগাপ্রকল্প, নির্মাণাধীন স্থাপনা, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, বসতবাড়ি ও কলকারখানার বর্জ্য, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার, রাজউক বা অন্যান্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় বায়ুদূষণ বাড়ছে। সব মিলিয়ে দূষণ যেন নগরজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী নারী ও নি¤œ আয়ের মানুষ, যাদের জন্য দূষণের অভিঘাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ সবচেয়ে কম। বায়ুদূষণের দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে পরিবেশ আইনগুলোর কঠোর প্রয়োগ অপরিহার্য। নতুন ইটভাটার অনুমোদন বন্ধ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো সময়ের দাবি। পরিবেশবান্ধব যানবাহন এবং শক্তিসাশ্রয়ী অবকাঠামো উন্নয়নকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
