ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা: নিষেধ নয়, নীতিমালাভিত্তিক সুশৃঙ্খলায়নের সময় এখন

দেশের নগর ও পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। স্বল্পভাড়া, সহজপ্রাপ্যতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কারণে এ যানবাহন দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে নীতিহীন বিস্তার, কারিগরি ত্রুটি, অনিয়ন্ত্রিত গতি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি-এসব কারণে অটোরিকশা এখন নীতিনির্ধারকদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। সিপিডি আয়োজিত আলোচনায় যে পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে, তা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়-এই যানবাহন নিষিদ্ধ নয়, বরং একটি সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত নীতিমালার আওতায় আনা জরুরি। গবেষণা তথ্যে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য অংশ অটোরিকশা-সংশ্লিষ্ট। লাইসেন্সবিহীন উৎপাদন, নি¤œমানের ডিজাইন, গতি নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং চালকদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে অবৈধ চার্জিং পয়েন্টের বিস্তার ও সীসাযুক্ত ব্যাটারির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, সমস্যা যানটির অস্তিত্ব নয়-সমস্যা নিয়ন্ত্রণহীনতা ও শাসনব্যবস্থার দুর্বলতায়। এখন প্রশ্ন-সমাধান কোন পথে? আলোচনায় উঠে আসা সুপারিশগুলো বাস্তবসম্মত। প্রথমত, অটোরিকশার জন্য একক ও কার্যকর জাতীয় নীতিমালা জরুরি, যাতে বিভিন্ন দপ্তরের ভিন্ন ভিন্ন নিয়মের কারণে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা না বাড়ে। দ্বিতীয়ত, গতি নিয়ন্ত্রণ, মানসম্পন্ন নকশা, নিবন্ধন ও কারিগরি অনুমোদন বাধ্যতামূলক করতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। তৃতীয়ত, পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি প্রযুক্তির দিকে ধাপে ধাপে রূপান্তর জরুরি। সীসাযুক্ত ব্যাটারি বর্জন ও রিসাইক্লিং কাঠামো উন্নয়নকে নীতিগত অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কারিগরি সংস্থার অংশীদারত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে অটোরিকশা সংকটের পেছনে আরেকটি কাঠামোগত বাস্তবতা রয়েছে-দুর্বল গণপরিবহন ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য বাস সার্ভিস না থাকায় মানুষ বিকল্প পরিবহন খুঁজেছে, যার শূন্যস্থান পূরণ করেছে অটোরিকশা। অতএব, গণপরিবহনে বিনিয়োগ ও সমন্বিত নগর পরিবহন পরিকল্পনা ছাড়া অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে কাক্সিক্ষত ফল দেবে না। শ্রমজীবী চালকদের জীবিকা, যাত্রী নিরাপত্তা, নগর শৃঙ্খলা ও পরিবেশ-সবদিক সমন্বয় করেই নীতিনির্ধারণ প্রয়োজন। অটোরিকশাকে হঠাৎ বন্ধ করা বা কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথ বাস্তবসম্মত নয়; বরং নীতিমালার আওতায় এনে সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থায় রূপান্তর করাই হতে পারে টেকসই সমাধান।
