দেশের বিভিন্ন স্থানে শৈত্যপ্রবাহ

প্রবাহ রিপোর্ট : যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এবং নীলফামারী জেলায় বয়ে যাচ্ছে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, যা শনিবারও অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবওহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে অনেক এলাকায় ঠান্ডার অনুভূতি অব্যাহত থাকবে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং কোথাও কোথাও তা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া সারাদেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদী অববাহিকায় কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার ভোর ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। গতকাল শুক্রবার ঢাকায় সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৫টা ১৯ মিনিটে এবং আজ শনিবার সূর্যোদয় ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে।
দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়: গতকাল শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা গতকাল শুক্রবার ছিল দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা। ভোর ৬টায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ডের সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার থেকেই চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। শীতের তীব্রতা বাড়ায় অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা মিললেও হিমেল বাতাসের কারণে শীতের দাপট কমছে না। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, সকালে রেকর্ড করা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চলতি মৌসুমের সর্বনি¤œ। জেলার ওপর দিয়ে বর্তমানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীতে বেড়েছে শীত: এদিকে রাজধানী ঢাকায় চলতি শীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা নেমে এসেছে প্রায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা গত বৃহস্পতিবার ছিল ১৪ ডিগ্রি। তার আগের দিন ছিল ১৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারাদেশেই ভোর ও রাতের দিকে কুয়াশা এবং ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। সকালে কাজে বের হওয়া মানুষ, বিশেষ করে নি¤œআয়ের শ্রমজীবী, পথচারী ও ভাসমান জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। শীত থেকে বাঁচতে অনেককে খোলা জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে বা অস্থায়ী উষ্ণতার ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অধিকাংশ জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা নেমেছে ১০ ডিগ্রির নিচেও। সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, যেখানে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে প্রায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একইভাবে খুলনা বিভাগের যশোরে তাপমাত্রা নেমেছে প্রায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঢাকা বিভাগে ঢাকা ছাড়া টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ফরিদপুরে তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রির ঘরে। রাজশাহী বিভাগে রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা ও নওগাঁয় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। বিভাগের কয়েকটি এলাকায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের অনুভূতি রয়েছে। রংপুর বিভাগে শীতের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে প্রায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধাতেও তাপমাত্রা ১০ থেকে ১১ ডিগ্রির মধ্যে অবস্থান করছে। ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা প্রায় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেট বিভাগে সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা নেমেছে প্রায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা আগের দিনের তুলনায় কম। খুলনা বিভাগে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১১ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রেকর্ড করা হয়েছে। বরিশাল বিভাগে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠিতে তাপমাত্রা রয়েছে প্রায় ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী ও কক্সবাজারে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির আশপাশে থাকলেও পাহাড়ি এলাকায় শীতের অনুভূতি তুলনামূলক বেশি। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা আরও কিছুদিন থাকতে পারে এবং সকাল ও রাতের দিকে কুয়াশা অব্যাহত থাকবে।
রংপুরে হাড় কাঁপানো শীত: রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলায় হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে প্রচ- ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই প্রকট যে কাছের কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার রংপুর বিভাগের নীলফামারীর ডিমলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। এ ছাড়াও রংপুরে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১১ ডিগ্রি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ১২ ডিগ্রি ঠাকুরগাঁয়ে ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি, লালমনিরহাটে ১২ ডিগ্রি ও গাইবান্ধায় ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার পাশাপাশি হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। এদিকে প্রচ- শীত, সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। রংপুর আবহাওয়া সূত্রে জানা গেছে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার তীব্রতাও বাড়ছে যা সকাল ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। গত ৩ দিন ধরে সূর্যের মুখ অল্প সময়ের জন্য দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসে সন্ধ্যার পর থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। রাত যত গভীর হয় তাপমাত্রা ততই কমতে থাকে। রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ জানান, তাপমাত্রা এখন প্রতিদিনই কমবে। বছরের শেষ কয়েকটা দিনে শীতের তীব্রতা আরও কমবে। সেই সঙ্গে মাঝারী শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রংপুর বিভাগীয় প্রশাসকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ৮ জেলায় শীতার্ত মানুষদের মাঝে বিতরণের জন্য শীতবস্ত্র এসেছে এবং বিতরণ শুরু হয়েছে। এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ভাইরাস জ্বর, নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া সর্দি, শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন শত শত শিশু শীতজনিত রোগের চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসছে। এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শহীদুল ইসলাম জানান, এবার শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। তিনি শিশুদের পর্যাপ্ত গরম পোশাক পরিয়ে রাখা, প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না করা ও ঠান্ডা যেন না লাগে সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।



