জাতীয় সংবাদ

এখনো জাতির ওপর থেকে কালো ছায়া যায়নি: জামায়াত আমির

প্রবাহ রিপোর্ট : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত ৫৪ বছর ছাত্রদের হাত থেকে কলম কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, কোমলমতি ছাত্রদের বিভ্রান্ত করে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের মেয়েদের ইজ্জতের কোনো গ্যারান্টি ছিল না। ছাত্রদের জীবনের, ক্যারিয়ারের কোনো গ্যারান্টি ছিল না। সেই কালো অধ্যায় আজকে বিদায় নিতে শুরু করেছে। কিন্তু কালো ছায়া এখনো জাতির ওপর থেকে যায়নি। এই কালো ছায়াকে খতম করা পর্যন্ত আমার লড়াই, ছাত্রশিবিরের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন-২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে শিবিরের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা জীবনের একটা পর্যায়ে চলে এসেছি। আমরা যা পেরেছি লড়াই করেছি। বাকি লড়াই, লড়াইয়ের শেষ গন্তব্য পর্যন্ত শক্ত করে হাতে হাত ধরে সামনের দিকে তোমাদের (শিবির) দৌড়াতে হবে। ছাত্রশিবির ছাত্র-ছাত্রীদের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, দায়িত্ব উপলব্ধি করে ছাত্রশিবিরের প্রতিটি কর্মী সমর্থককে নিজেদেরকে গড়তে হবে এবং তার সহপাঠিদের গড়ার জন্য দায়িত্ব নিতে হবে। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রিয় শিবির তোমাদের কাঁধে অসংখ্য শহীদের লাশ। আর তোমাদের কাঁধে ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশার বোঝা। আল্লাহতালা এই বোঝা তোমাদের জন্য হালকা করে দিন। এই বোঝা বহন করার শক্তি তোমাদের দান করুন। তোমাদের এই বিজয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইঙ্গিত দিচ্ছে আগামী দিনে ইনসাফের বিজয় হবে বাংলাদেশে। তিনি বলেন, আজকে আমরা যে বাংলাদেশ দেখছি এই বাংলাদেশ পেতে ৪৭ থেকে ২৪ পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাংলাদেশকে এই পর্যায়ে আসতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা আব্দুল মালেক থেকে শুরু করে সর্বশেষ বিপ্লবী শরিফ ওসমান হাদি পর্যন্ত অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা তাদের জীবন এবং রক্তের কাছে ঋণী। তিনি বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির আজ শুধু একটি সাধারণ ছাত্র সংগঠন নয়, কার্যত চব্বিশের বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আপামর ছাত্রসমাজ তাদের অন্তরের ভালোবাসা দিয়ে এই সংগঠনকে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে এই ম্যান্ডেট দিয়েছে যে, আজ ছাত্রশিবিরকে ছাত্র সমাজের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চরিত্রগঠন, নৈতিক শিক্ষা. আধুনিক শিক্ষা এবং গবেষণার উর্বরক্ষেত্রে পরিণত করতে হবে। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কলমের বদলে অস্ত্র হাতে না উঠে, মাদকের বোতল হাতে না উঠে, মেয়েদের নিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি করা না হয়, আমাদের মায়েরা-মেয়েরা যাতে শান্তি এবং নিরাপত্তার সঙ্গে লেখাপড়া করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টির প্রধান দায়িত্ব আজকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর অর্পিত হয়েছে। আগামী দিনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য এই ছাত্র সমাজকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বেকার ভাতা নিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে আর একজন যুবক-যুবতিও বেকার থাকবে না। অনেকে সংখ্যা গুণে বলছেন আমরা এতো কোটি এতো লাখ যুবককে কর্মসংস্থান দেব। বাকিদের কি হবে? বলছেন, বাকিদের ভাতা দেবেন। যুবকরা কারও কাছ থেকে বেকার ভাতা গ্রহণ করুক, তা আমরা দেখতেও চাই না, শুনতেও চাই না। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি যুবকের হাতকে দেশ গড়ার কারিগরের হাতে পরিণত করতে চাই, প্রত্যেকটি হাতে কাজ তুলে দিতে চাই। বেকার ভাতা নয়, বেকার ভাতার পরিবর্তে এরাই দেশের সব ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধন করবে, সেই বিপ্লবের বাণী তাদের মুখে পৌঁছে দিতে চাই। শক্তি তাদের বুকে তুলে দিতে চাই, আর তাদের হাতে কাজ তুলে দিতে চাই। ছাত্রসমাজ শিবিরকে ইনসাফের প্রতীক হিসেবে দেখতে চায় বলেই ভোট দিয়েছে উল্লেখ করে ডা. শফিকুর বলেন, অন্য কোনো কারণ নেই। আজ বাংলাদেশে ইনসাফের বড় অভাব। আর সেই ইনসাফের ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর কোরআন। কোরআন ও নবী রাসূলের (সা.) সুন্নাহ বাদ দিয়ে দুনিয়ায় কোথাও ইনসাফ কোনোকালে কায়েম হয়নি। হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই ব্যাপারে আমরা খুবই ডেসপারেট। বিধান অনুযায়ী মানুষের জীবনের শৃঙ্খলা সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দামের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী পর্বের পর প্রথম অধিবেশনে দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও বরেণ্য অতিথিরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) চেয়ারম্যান আনওয়ারুল ইসলাম চান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিরা। বন্ধুপ্রতিম ছাত্রসংগঠনের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাগপা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী, জাতীয় ছাত্র সমাজ (কাজী জাফর)-এর সভাপতি কাজী ফয়েজ আহমেদ, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের সভাপতি আব্দুল আজিজ, বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের সভাপতি সৈয়দ মো. মিলন, ভাষানী ছাত্র পরিষদের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি)-এর সভাপতি মেহেদি হাসান মাহবুব, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আবু দারদা এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের সভাপতি বি. এম. আমির জিহাদী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের সভাপতি মোহাম্মদ প্রিন্স আল আমিন, ছাত্র মিশনের সভাপতি মো. রেজাউল ইসলাম সিয়াম এবং ছাত্র ফোরামের আহ্বায়ক রিয়াদ হোসেন। দুপুর ১টায় কেন্দ্রীয় সভাপতির সমাপনী বক্তব্য ও দোয়ার মাধ্যমে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হয়।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button