সম্পাদকীয়

নারীর অধিকার নিশ্চিত হোক

নারী-পুরুষ একে অন্যের আভরণস্বরূপ। আভরণ মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, দুর্যোগ ও দুর্বিপাক থেকে রক্ষা করে, লজ্জা নিবারণ করে। তাই পোশাক-পরিচ্ছেদ মানুষের জীবনধারণের জন্য যেমন অপরিহার্য, তেমনি নারী-পুরুষ পরস্পরের জন্য অতীব জরুরি। একজন ছাড়া আরেকজন চলতে পারে না। বিপদাপদ, জরা-মৃত্যু ও দুর্যোগ-দুর্বিপাকে একজন আরেকজনের সহায়ক ও রক্ষাকারী। একজন আরেকজনের প্রেরণাদানকারী। পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহায়তাকারী। সন্তান লালন-পালনে সহযোগী। দুঃখ-কষ্টে একসঙ্গে ভোগকারী। কার্যসম্পাদনে সাহায্যকারী। মানব প্রজন্মের ধারাবাহিতাও উভয়ের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই প্রবহমান। সুতরাং একজন থেকে আরেকজনকে পৃথক করে কিংবা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বরং পারিবারিক স্নেহ-মমতা, আদর-আপ্যায়ন, শান্তি-শৃঙ্খলা সন্তান গর্ভেধারণ ও লালন-পালন ইত্যাদির দিক দিয়ে যদি বিচার করা হয়, তাহলে দেখা যাবে এসব বিষয়ে স্ত্রীর অবদান স্বামীর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি; যা কোনো সময়ই অর্থের মানদন্ডে বিচার করা যাবে না। নারীর জন্ম থেকেই জীবনযুদ্ধ শুরু হয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তার জীবন পার করতে হয়। বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবন, সংসার জীবন এমনকি কর্মক্ষেত্রেও নানা বাধা মোকাবেলা করতে হয়। নারীর অগ্রগতির পথে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেড়েছে। বর্তমানে গ্রামে ও শহরে নারীদের অবস্থানে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সমাজে ‘নারীর নিরাপত্তাহীনতা’ একটি বড় সমস্যা। গৃহশ্রমিকরা নির্যাতনের শিকার হয় মালিকের বাড়িতে। সেখানে সে একা থাকে। তাই সে নির্যাতনের প্রতিবাদও করতে পারে না। আর মামলা হলে তার পক্ষে সে নিজে ছাড়া আর কোনো সাক্ষীও থাকে না। ফলে এখানে নির্যাতন বেশি। যেমন, পোশাককর্মীরা একসঙ্গে কাজ করে। তাই তারা প্রতিবাদ করতে পারে। শারীরিক, সামাজিক, মানসিকÑ সব ক্ষেত্রেই নারীরা ঝুঁকিতে থাকে। নারীর প্রতি সহিংসতার একটি কারণ হলো, তাকে গুরুত্বপূর্ণ বা সম্মান ও মর্যাদার যোগ্য হিসেবে না দেখা। পরিবারের ও সমাজের মধ্যে নারীর প্রয়োজনীয় ভূমিকা এখনো স্বীকৃত নয়, বরং প্রায়ই তা উপেক্ষিত থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রকে নারীবান্ধব করে তোলা, যাতে নারী ভয়মুক্ত জীবনযাপন করতে পারে। এজন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নারীর অবদান তুলে ধরে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালু করতে হবে। নারীবিদ্বেষী সামাজিক প্রথা ও বৈষম্যমূলক সকল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button