একীভূত ব্যাংকের আমানতকারীরা এ বছরে আর টাকা পাচ্ছেন না

প্রবাহ রিপোর্ট : মার্জারের (একীভূতকরণ) আওতাভুক্ত ৫টি ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা উত্তোলনের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে আমানতকারীদের টাকা দেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। এখনও সুনির্দিষ্ট তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। তবে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে মার্জারের আওতাভুক্ত একটি ব্যাংকের আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারবেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে তথ্য ছড়িয়েছে, তাকে ‘ভিত্তিহীন ও অসত্য’ বলে নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, মার্জারের আওতাভুক্ত পাঁচটি ব্যাংকের আমানতকারীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি নীতিগতভাবে বিবেচনায় রয়েছে এবং শিগগিরই তা শুরু হবে। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনও নির্দিষ্ট তারিখ বা সময় চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কয়েকটি গণমাধ্যমে ২৯ ডিসেম্বর থেকে টাকা উত্তোলনের যে খবর প্রচার করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। এসব অসত্য তথ্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অবস্থানের কারণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে- মার্জারের আওতাভুক্ত ব্যাংকগুলোর আমানতকারীরা চলতি বছরের মধ্যে টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাচ্ছেন না। কবে নাগাদ এ সুবিধা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা আসেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২৬ সালের শুরু থেকেই ধাপে ধাপে টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাবেন গ্রাহকরা। যেসব গ্রাহকের হিসাবে দুই লাখ টাকার বেশি জমা রয়েছে, তারা ঘোষিত স্কিম অনুযায়ী প্রথমে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা তুলতে পারবেন। এরপর প্রতি তিন মাস পরপর এক লাখ টাকা করে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত অর্থ উত্তোলনের সুযোগ থাকবে। তবে ৬০ বছরের বেশি বয়সী আমানতকারী এবং ক্যানসারে আক্রান্ত গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এই বিধান শিথিল রাখা হচ্ছে। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী যে-কোনও সময় যে-কোনও পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর শাখা থেকে আমানতকারীরা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারবেন। এই অর্থ দেওয়া হবে আমানত বিমা তহবিল থেকে। তবে কোনও গ্রাহকের একটি ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলে তিনি কেবল একটি হিসাব থেকেই অর্থ তুলতে পারবেন। আর যদি কারও পাঁচটি ব্যাংকেই হিসাব থাকে, তাহলে প্রতিটি ব্যাংক থেকেই নির্ধারিত অঙ্কের টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, এই স্কিমের মূল উদ্দেশ হলো আমানতকারীদের আস্থার সংকট দূর করা এবং ধাপে ধাপে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। একীভূত প্রক্রিয়ায় থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংককে অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাজধানীর সেনাকল্যাণ ভবনে এর প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং আমানত বিমা তহবিল থেকে আসছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এদিকে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা ৫টি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার শূন্য করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর প্রকৃত সম্পদের মূল্য ঋণাত্মক হওয়ায় ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আওতায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এসব ব্যাংকে প্রায় ৭৫ লাখ আমানতকারীর ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা জমা থাকলেও ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার সিংহভাগই খেলাপি হয়ে পড়েছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ২২ লাখ ২ হাজার ১৯ জন। এসব হিসাবে মোট জমা রয়েছে ২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এক লাখ এক টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৬ জন, এ হিসাবে জমা রয়েছে ২ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ১২ লাখ ৮১ হাজার ৮৫৮ জন এবং আমানত ১ হাজার ২০২ কোটি টাকা। এক লাখ এক টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ১৫৮ জন, যাদের হিসাবে জমা রয়েছে ১ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৪০৮ জন, এসব হিসাবে আমানত ১ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। এক লাখ এক টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৪০৬ জন, আমানত ২ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৫১ হাজার ৪৬০ জন এবং আমানত ৭০৭ কোটি টাকা। এক লাখ এক টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ৩৬ হাজার ৯১২ জন, আমানত ৫৫৭ কোটি টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪২১ জন, এসব হিসাবে আমানত ৬৩১ কোটি টাকা। এক লাখ এক টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৬৪৪ জন, আমানত ৪২৮ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বছরের শুরুতেই টাকা উত্তোলনের এই উদ্যোগ আমানতকারীদের আস্থা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং ইসলামী ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা কাটাতে সহায়ক হবে।



