জাতীয় সংবাদ

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া গেল ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৮ টাকা

প্রবাহ রিপোর্ট : কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৮ টাকা মিলেছে। গতকাল সকাল ৭টায় ১৩টি সিন্দুক খোলার পর ১২ ঘণ্টা ২০ মিনিট গণনা শেষে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের দিকে মোট টাকার পরিমাণ জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মো. এরশাদুল আহমেদ।
তিনি জানান, এবার সিন্দুক খোলা হয়েছে ৩ মাস ২৭ দিন পর। এর আগে চলতি বছরের ৩০শে আগস্ট মসজিদের ১৩টি দানবাক্স খোলে পাওয়া যায় ৩২ বস্তা টাকা। তখন ৪ মাস ১৮ দিনে পাওয়া গিয়েছিল ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা। এ ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা পাওয়া গিয়েছিল।
সকাল ৭টায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা ও পুলিশ সুপার (এসপি) ড. এস এম ফরহাদ হোসেনের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। সিন্দুক থেকে মিলে ৩৫ বস্তা টাকা। পরে সেগুলো মসজিদের দোতলায় নেয়া হয় গণনার জন্য। দিনভর গণনার পর দানবাক্স থেকে পাওয়া যায় এসব টাকা।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খানসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, টাকা গণনায় অংশ নেয় পাগলা মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসার ১১০ জন ও আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসার ২৫০ জন ছাত্র, পাগলা মসজিদের ৩৩ জন স্টাফ, রূপালী ব্যাংকের ১০০ জন কর্মকর্তা, এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রায় অর্ধশতাধিক সদস্য গণনায় অংশ নিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. এরশাদুল আহমেদের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা পুরো কাজ তদারকি করছেন। দানবাক্স খোলার সময় মসজিদ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
রূপালী ব্যাংকের এজিএম মোহাম্মদ আলী হারিছি জানান, এবারো পাওয়া গেছে বিদেশি মুদ্রা। রয়েছে সোনা ও রুপার অলঙ্কার। সবকিছু গুনে, সাজিয়ে শেষ করে পাওয়া গিয়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৮ টাকা। দানবাক্সে পাওয়া গেছে অনেক চিঠিও। কেউ চাকরির জন্য দোয়া চেয়েছে। কেউ সুস্থতার জন্য। কেউ আবার সন্তানের সাফল্যের জন্য লিখেছে। জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা জানান, পাগলা মসজিদকেন্দ্রিক একটি ইসলামী কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। ভবনটি হবে ১০ তলাবিশিষ্ট এবং এখানে বহুমুখী কাজ করা হবে। এখানে অনাথ-এতিমদের জন্য লেখাপড়ার ব্যবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষা, মাদ্রাসাশিক্ষা, একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, ক্যাফেটেরিয়া ও আইটি সেকশনও থাকবে।
দানবাক্স খোলার পর গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় করেন উৎসুক মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকে আসেন দূরদূরান্ত থেকে। তবে বেশি লোকজন আসেন প্রতি শুক্রবারে। মসজিদটিতে নিয়মিত হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগলের পাশাপাশি নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষ। ইটনা উপজেলা থেকে আরিফ রহমান এসেছেন টাকা গণনা দেখতে।
তিনি বলেন, এ যেন টাকার পাহাড়। লাইনে বসে টাকা গুনছেন মাদ্রাসার শত শত শিক্ষার্থী। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, আধুনিক তুরস্কের বসফরাস প্রণালির পাশের মাল্টিপারপাস মসজিদগুলোর আদলে পাগলা মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি বৃহৎ ইসলামী কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। প্রায় ১০ তলা বিশিষ্ট এ ভবনে একসঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।
পাশাপাশি নারী মুসল্লিদের জন্য আলাদা জায়গা, এতিমদের শিক্ষাব্যবস্থা, মাদ্রাসা, লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া ও আইটি সেকশনসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকবে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button