সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নিন

শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও মৃত্যু বাড়ছে

দেশে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বৃদ্ধির জন্য মূলত দায়ী অত্যধিক বায়ুদূষণ। সেই সঙ্গে আছে অন্যান্যভাবে পরিবেশদূষণ, ক্রমবর্ধমান হারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার, ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার ইত্যাদি। জানা যায়, রাজধানীতে থাকা জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২০২০ সালে মোট চিকিৎসা নেয় এক লাখ ১০ হাজার ৭৭৪ জন এবং মৃত্যু হয় ৮৭৭ জনের। ২০২১ সালে এক লাখ ৩৮ হাজার ২৪৮ জন চিকিৎসা নেয় এবং মৃত্যু হয় ৯৪৫ জনের। ২০২২ সালে চিকিৎসা নেয় এক লাখ ৬১ হাজার ৮৩৩ জন এবং মৃত্যু হয় ৯৪৭ জনের। সারা দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আসা রোগী ও মৃতের সংখ্যা হিসাবে নিলে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। এ ছাড়া নিম্নবিত্তের বহু মানুষের মৃত্যু হয় বাড়িতেই, এমনকি যথাযথ চিকিৎসা ছাড়াই। শ্বাসতন্ত্রের রোগ নিয়ে সারা দেশের কোনো পরিপূর্ণ গবেষণা নেই। বিচ্ছিন্ন কিছু গবেষণায় যেসব তথ্য উঠে আসছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এখানে গত চার বছর যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছে, তাদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যে গবেষণাটি করা হয়েছে, তা থেকেও এই রোগের ব্যাপকতা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে তার প্রভাব নিয়ে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। ২০২২ সালের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ৬০ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ শতাংশ নারী। বয়সের ভিত্তিতে ৭.৯৬ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী ১৫.৪২ শতাংশ, ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৩০.২৩ শতাংশ, পঞ্চাশোর্ধ্ব রোগী ৪৬.৩১ শতাংশ। মৃত্যুর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পঞ্চাশোর্ধ্বরাই বেশি অর্থাৎ প্রায় ৭২ শতাংশ। মানুষের সবচেয়ে কর্মক্ষম থাকার যে বয়স, সেই ১৬ থেকে ৪৯ বছর বয়সের মধ্যে আক্রান্তের হার প্রায় ৪৬ শতাংশ। মৃত্যুর হার কম হলেও আক্রান্তদের কর্মক্ষমতা বহুলাংশে হ্রাস পায়। মৃত্যুর বিচারে নারীর (২২.৯১ শতাংশ) তুলনায় পুরুষরা অনেক বেশি, ৭৭ শতাংশেরও বেশি। বিশেষজ্ঞরা এজন্য পুরুষদের অতিরিক্ত ধূমপানকেও অনেকটা দায়ী করেন। শীতের সময় মানুষের শ্বাসকষ্ট বা আক্রান্তের হার অনেক বেড়ে যায়। এর প্রধান কারণ অতিরিক্ত বায়ুদূষণ। এ সময় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ক্রমেই জটিল রূপ নিতে থাকবে, তখন তার ব্যবস্থাপনাও কঠিন হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button