মশা নিধন কার্যক্রম বছরব্যাপী চলুক
ভয়াবহ ডেঙ্গু
দেশে ডেঙ্গু এখন বলা যায় সারা বছরের রোগে পরিণত হয়েছে। আগে বলা হতো ডেঙ্গু গ্রীষ্ম মৌসুমের রোগ। তখন দেখা গেছে, গ্রীষ্মের পর ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমেই কমে এসেছে। কিন্তু এবার নভেম্বরের মাঝামাঝি অর্থাৎ বছরের প্রায় শেষ সময়ে এসেও দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গুর সংক্রমণ শুধু অব্যাহতই নেই, বলা যায় ঊর্ধ্বমুখী। গত ১৫ নভেম্বর ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা ছিল একদিনে এ বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু। এটি দেশবাসীর জন্য শুধু একটি সতর্কবার্তাই নয়, অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। সম্ভবত রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে ডেঙ্গুর এ ভয়াবহতা সংশ্লিষ্টদের নজর এড়িয়ে গেছে। তা না হলে বিষয়টি তাদের কাছে যতটা গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল, তা লক্ষ করা যাচ্ছে না কেন? চলতি বছর এ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি। সারা দেশের হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী। শুরুতে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গেলেও বর্তমানে সারা দেশে তা ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে সিংহভাগ রোগীই ঢাকার বাইরের। অর্থাৎ ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। মশা নিধনে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন বহু নজির রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নিলে এ বছর ডেঙ্গু এতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করত না। এ ক্ষেত্রে যারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন, তাদের জবাবদিহি হওয়া উচিত। এ ছাড়া ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি বা গাফিলতি রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ এদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইতঃপূর্বে স্যালাইনের কৃত্রিম সংকটসহ কিছু অব্যবস্থার অভিযোগও উঠেছে। এসব দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। ডেঙ্গুকে এখন সারা বছরের রোগ বিবেচনা করেই এডিস মশা ও এ রোগ নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। বোঝা যাচ্ছে, এডিসের উৎপাত বছরজুড়েই থাকবে। এডিস মশা প্রতিকূল জলবায়ুর সঙ্গে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে শুরু করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও এ প্রজাতির মশার উৎপাত বেড়েছে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সংশ্লিষ্টদের মশা নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। মশা নিধনের ওষুধ নির্ধারণ করতে হবে অবশ্যই কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ অনুযায়ী। ওষুধ ক্রয়ে যাতে কোনো ধরনের দুর্নীতি না হয়, তা কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে। ওষুধ ছিটাতে হবে বছরজুড়ে এবং তা সর্বত্র ও সমানভাবে। এর পাশাপাশি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। কারণ সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মশক নিধনকারীরা সবার বাড়ির ভেতরে ঢুকে ওষুধ ছিটাতে পারবেন না; তা সম্ভবও নয়। কাজেই কারও বাড়িতে যাতে মশার প্রজননক্ষেত্রের অনুকূল পরিবেশ তৈরি না হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিজেদের।