সম্পাদকীয়

প্রাণরক্ষাকারী স্যালাইন ঘিরে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট

ঋতু পরিবর্তনকালে ব্যাপক হারে বাড়ছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে বেশির সংখকই শিশু। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত সাড়ে তিন মাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ২ হাজার ১০৯ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। চলতি মাসে গড়ে প্রতিদিন এক শ শিশু ভর্তি হয়েছে নিউমোনিয়ায়। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলোয় ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মতোই হাল স্যালাইনের। ফলে রাজশাহীতে নিউমোনিয়ার স্যালাইনের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। স্যালাইনের জোগান দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ-১০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে তা কিনতে হচ্ছে। এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমলেও নিউমোনিয়া বাড়ায় এখন ফের সংকট দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় এপিএন স্যালাইনের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় স্বজনরা চড়া দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ওষুধের দোকানে ৬৫ টাকার এপিএন স্যালাইন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের স্যালাইন পাওয়া গেলেও এপিএন স্যালাইনের হাহাকার চলছে। এপিএন, বেবি সল্টসহ আরও কিছু স্যালাইন চিকিৎসকরা লিখছেন। কিন্তু সেগুলো রাজশাহীর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি দাম দিতে চাইলে ফার্মেসির লোকেরা এনে দিচ্ছেন। এতে করে বুঝাই যাচ্ছে, এ সযোগে ফার্মেসিগুলো স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কয়েকগুণ দাম আদায় করছে। যেখানে, এপিএন স্যালাইনের ৫০০ এমএল ব্যাগের গায়ে লেখা দাম মাত্র ৬৫ দশমিক ২৫ টাকা। আর ১০০০ এমএলের দাম ৮৬ দশমিক ৩২ টাকা। ডিএনএস-১০ স্যালাইনের দাম ৮০ টাকার মধ্যে। এমন অরাজক পরিস্থিতির মধ্যেও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নীরব থাকায় ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেননা-নিউমোনিয়ার প্রতিরোধী এ ধরনের এক ব্যাগ স্যালাইনের সর্বোচ্চ দাম ১০০ টাকা হতে পারে। কিন্তু ১ হাজার ২০০ টাকা হবে-এটা খুবই অস্বাভাবিক। শিশু আক্রান্ত হওয়ায় হয়তো কিছু চাহিদা বেড়েছে। তবে কোম্পানিগুলো সরবরাহ বাড়াচ্ছে না। এ কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। তবে ৬৫ টাকার স্যালাইন ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হওয়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। সূত্রমতে জানা যায়, শিশুদের প্রাণরক্ষাকারী স্যালাইন ঘিরে রাজশাহীতে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। অভিভাবকদের জিম্মি করে স্যালাইনের দাম প্রায় ২০০ গুণ বাড়িয়েছে কতিপয় ওষুধ ব্যবসায়ী। তবে স্যালাইন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো দাম বাড়ায়নি। এমনিতেই আর্থিক কষ্টে থাকা পরিবারের শিশুরা অপুষ্টিতে, আর রোগে ভোগে বেশি। সরকারি হাসপাতালেও তারাই বেশি যায়। তাই অন্তত সেখানে গিয়ে যেন স্যালাইনটা পায়, তা নিশ্চিত করা হোক এবং যারা এভাবে মানুষকে জিম্মি করে কয়েকগুণ দামে স্যালাইন ক্রেতাদের কিনতে বাধ্য করছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওত্তায় আনা হোক। অর্থাৎ, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটি দূর করার জন্য নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button