সম্পাদকীয়

অহেতুক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে

কাজ করছে না অ্যান্টিবায়োটিক

দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের বহুবিধ অপব্যবহার করা হয়। সামান্য পেট খারাপ, সর্দিজ¦রসহ নানা কারণেই মানুষ নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকেন এবং কোর্স সম্পন্ন করেন না। আজকাল হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলকেও মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছে। মাংসের মাধ্যমে তা চলে আসছে মানবদেহে। এসব কারণে জীবাণুরা ক্রমশ বেশি করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। বর্তমানে অবস্থা এমন হয়েছে যে জীবাণুঘটিত অনেক গুরুতর রোগেও অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় উঠে এসেছে, শুধু ২০১৯ সালে বিশ্বে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে জীবাণুরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার কারণে। বাংলাদেশে রোগজীবাণু কতটা প্রতিরোধক্ষমতা অর্জন করেছে এবং তার ফলে প্রতিবছর কত মানুষ মারা যাচ্ছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে চিকিৎসকদের মতে, তাঁরা রোগীদের মধ্যে ক্রমেই বেশি করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর উপস্থিতি লক্ষ করছেন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বেশ কিছু রোগের জীবাণুর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এখন ঠিকমতো কাজ করছে না। ছয় হাজার ৮৬৮ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৮ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে প্রায় কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ না করার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। আগেও বিভিন্ন গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ রোগীর শরীরে বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার অর্থ হলো অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলেও সেই জীবাণু ধ্বংস হবে না। অসহায়ের মতো রোগীর মৃত্যু তাকিয়ে দেখতে হবে। তার পরও কেন অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? এত লেখালেখি, আলোচনার পরও মানুষ কেন সচেতন হচ্ছে না? গত সপ্তাহে রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রিশিল্পে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। এসব প্রাণীর মাংস খেয়ে মানবশরীরেও অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্ট্যান্স বা প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রাণীর চিকিৎসায় ৩৪ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-নিষেধ যাতে সঠিকভাবে পালিত হয় সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button