প্রতারণা বন্ধ ও দক্ষ জনশক্তি গড়া জরুরি
প্রবাসে কর্মসংস্থান
অভাব-অনটন বেশি থাকা এবং আয়-উপার্জনের সুযোগ কম থাকায় প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি বিদেশে পাড়ি জমান। তবে করোনা মহামারির প্রভাবে যেসব প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছিলেন, করোনার প্রভাব কাটার পর তাদের অনেকেই বিদেশে গিয়ে আর কাজ পাচ্ছেন না। ফলে তারা আবার দেশে ফিরে আসছেন। এমন ফিরে আসা কর্মীর সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরুর এক জরিপে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য। উল্লেখ্য, করোনা মহামারির প্রভাবে চার লাখের বেশি প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছিলেন। করোনার প্রভাব কাটার পর গত বছর থেকে প্রতি মাসে এক লাখ করে কর্মী যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে; আবার নানা কারণে ফিরেও আসছেন অনেকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের প্রবাসী আয়ের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা কাটিয়ে ওঠা জরুরি। প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এর প্রবাহ হ্রাস পেলে কী ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই এ বিষয়টিতে আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। বিদেশে কর্মী হিসাবে যাদের পাঠানো হয়, তাদের দক্ষতার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। জরিপে দেখা গেছে, ফিরে আসা শ্রমিকদের সবাই অদক্ষ। বস্তুত মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যে জনশক্তি রপ্তানি করা হয়, তাদের অধিকাংশই আধা দক্ষ বা অদক্ষ পর্যায়ের। অদক্ষ হওয়ায় সেসব শ্রমিকের মজুরি হয় খুবই কম। ফলে জমিজমা বিক্রি বা ঋণ করে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার পর কঠোর পরিশ্রম করেও খরচের টাকা উঠানোই তাদের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়ে। এ বাস্তবতা সামনে রেখে দেশে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এ লক্ষ্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা এবং ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’কে আরও কার্যকর করে তুলতে হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে দক্ষ জনশক্তি পাঠানো হলে তাতে শুধু সংশ্লিষ্ট কর্মীরাই নন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি উপকৃত হবে। উদ্বেগের বিষয় হলো, অনেকে অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টাকালে দালাল ও প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। দীর্ঘকাল ধরেই বিদেশ গমনেচ্ছু সাধারণ মানুষ প্রতারকদের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছে। মিথ্যা আশ্বাস, প্রলোভন, বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর ঘটনা ঘটছে। মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রচারের দ্বারা অসংখ্য মানুষ যে শুধু সর্বস্বান্ত হচ্ছে তা-ই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে বিপদে পড়তে হচ্ছে। শ্রমিকরা বিদেশে গিয়ে নানা রকমের সমস্যার মধ্যে পড়ছেন। অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরু’র সম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, বিদেশে গিয়ে বিমুখ হয়ে ফেরা ৭৪ শতাংশ বাংলাদেশি কর্মী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ মানসিকভাবে, ৯ শতাংশ শারীরিকভাবে এবং ১ শতাংশ সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যান। তবে কাজ না পেয়ে, আটকে থেকে ও নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে বেশির ভাগ কর্মীকে ফিরে আসতে হয়। ২০২০ সালের পর বিদেশফেরত ২১৮ জন কর্মীর ওপর জরিপ চালায় রামরু। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক মাস এই জরিপ চালানো হয়। এই ২১৮ জন কর্মীর মধ্যে ৪২ জন নারী। বিদেশে নারী কর্মীরা প্রায়ই নানা সমস্যায় পড়ছেন। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঠিকমতো বেতনও দেওয়া হয় না। অনেককে খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়। এতে দেশ ক্ষতির মুখে পড়ছে। তাই দালাল ও প্রতারকদের খপ্পর থেকে বিদেশ গমনেচ্ছুদের সুরক্ষার পাশাপাশি উপযুক্ত ও দক্ষ জনশক্তি হিসাবে তাদের গড়ে তোলা হবে এবং বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ অন্বেষণের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।