সম্পাদকীয়

সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে

ধর্মের প্রশ্নে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। প্রত্যেককে তার ধর্ম পালনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অন্যের ধর্মের প্রতি ঘৃণা ও নিন্দা প্রকাশের অধিকার কারও নেই। এই মৌলিক বিশ্বাসই আমাদের মধ্যযুগীয় বা এমনকি আধুনিক যুগের শুরুর দিকের চিন্তাধারা থেকে পৃথক করে। আধুনিক সভ্যতার একটি মৌলিক অর্জন হচ্ছে, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং এর সুচারু বাস্তবায়নের ভিত্তিতে বিশ্বের সব সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন দিনেদিনে বেড়েই চলছে, বিশেষ করে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর বিভিন্ন অত্যাচার হচ্ছে, বাড়িঘর জ¦ালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে কারণে অকারণে সহিংস নির্যাতনের শিকার হন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা। এক গবেষণায় দেখা যায় ২০১৩ সাল থেকে গত নয় বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাড়ে তিন হাজারের বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার মধ্যে হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং পূজাম-প, মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ অন্যতম। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৯টি বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এই সময়ে হিন্দুদের ৪৪২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রতিমা, পূজাম-প, মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৭৮টি। এসব হামলায় আহত হয়েছে ৮৬২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। নিহত হয়েছে ১১ জন। এর বাইরেও ২০১৪ সালে দুজন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হন। শ্লীলতাহানি করা হয় আরও চারজনের। এ ছাড়া ২০১৬, ২০১৭ ও ২০২০ সালে ১০টি হিন্দু পরিবারকে জমি ও বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দখলের অভিযোগ ওঠে। দুঃখজনক হলেও দেখা যায় এসব হামলার এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিচারের আওতা থেকে বেচে যায় ফলে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা দিনেদিনে বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। তারপরও দেশে অনেক সময় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও সহিংসতা হয়েছে যা কিনা দেশের জন্য লজ্জাজনক। তাই সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা না হয় তার জন্য সরকারকে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই প্রথমত অপরাধী যেই হোক, তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে এই নীতি মেনে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাস-সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্র এবং নাগরিকদের একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ সবকিছু এক করে নিতে হবে। সবাইকেই নিজনিজ ধর্ম পালনে কোন বাঁধা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই দল মতো জাঁতি নির্বিশেষে সবই ভুলে গিয়ে সবাই একত্রে কাজ করে দেশের প্রতি পরস্পর প্রীতি সৌহার্দ বজায় রাখতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button