সম্পাদকীয়

কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে

বাড়ছে শিশুদের উপর নির্যাতন

আজকের শিশু আগামীর কর্ণধার, জাতির ভবিষ্যৎ কান্ডারী। তারাই দেবে জাতিকে নেতৃত্ব। তাই এই শিশুদের গড়ে তুলতে হবে আদর ও স্নেহ দিয়ে। কিন্তু দেখা যায় দেশের অধিকাংশ শিশুই বড়ো হচ্ছে নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে। দেশে দিনেদিনে বৃদ্ধি পাঁচ্ছে শিশু হত্যা, যৌন ও শারীরিক নির্যাতন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুরা অপরিচিত ব্যক্তিদের চেয়ে পরিচিতদের দ্বারাই বেশি নির্যাতিত হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ঘটনাগুলো অপ্রকাশিত থেকে যায়। লোকলজ্জা ও সামাজিকতার কারণে বিষয়গুলো পরিবারের মধ্যেই মিটমাট করে ফেলার চেষ্টা করা হয়। শিশুর প্রতি চার ধরণের আচরণকে নির্যাতন বলা হয়। শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, অবহেলা জনিত নির্যাতন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ (০-১৪ বছর) শতাংশেরও বেশি শিশু রয়েছে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশের ৬৯ শতাংশ অভিভাবকের মতে নিয়মানুবর্তিতার বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শাস্তি দেওয়াটা অনেক বেশি প্রয়োজন। দেশে শতকরা প্রায় ৭৭.১ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে খারাপ ফলাফল ও অনিয়মের কারণে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ১৪ বছর বয়সের বাংলাদেশের প্রায় ৮২ভাগ শিশু নানান ধরনের সহিংসতার সম্মুখীন হয়। দেশের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছে। দেখা যায় এদের বড় অংশই ছোটবেলায় কোনো না কোনো নির্যাতনের শিকার ছিল। শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে তাদের জীবন আলোকিত ও সম্ভাবনাময় করে তোলার বিষয়টি আমাদের দেশে মেনে চলা হয় না। দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও অসংখ্য শিশুকে বেঁচে থাকার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। কলকারখানায় শুধু নয়, অনেকের বাসাবাড়িতেও অল্পবয়সী শিশুদের কাজ করতে দেখা যায়। আর ওইসব শিশুদের বেশীরভাগই সব ধরনের নির্যাতনের স্বীকার হয়ে থাকে। বাংলাদেশে শিশু আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি তার হেফাজতে, দায়িত্বে বা পরিচর্যায় থাকা কোনো শিশুকে আঘাত, উৎপীড়ন, অবহেলা, বর্জন, অরক্ষিত অবস্থায় পরিত্যাগ, ব্যক্তিগত পরিচর্যার কাজে ব্যবহার বা অশালীনভাবে প্রদর্শন করে, যাতে সংশ্লিষ্ট শিশুর দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়, শরীরের কোনো অঙ্গ বা ইন্দ্রিয়ের ক্ষতি হয় বা কোনো মানসিক বিকৃতি ঘটে, তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং ওই অপরাধের জন্য তিনি অনধিক পাঁচ বছর কারাদ- অথবা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে ২০১১ সালে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। একই বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এত আইন থাকা সত্ত্বেও শিশুদের উপর নির্যাতন বন্ধ নেই। আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে নির্যাতনকারীরা ঠিকই বেড়িয়ে যাচ্ছে। তাই শিশু নির্যাতন বন্ধে সরকারকে নিয়মিত মনিটরিং, টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। শাস্তির বিধি অনুযায়ী নির্যাতনকারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সচেতনতা তৈরি এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অভিভাবকের মাধ্যমে শিশুকে মারধর ও তাদের প্রতি কঠোর ব্যবহার, পথশিশু, গৃহকর্মী এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিতে হবে। সর্পরই শিশু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আর তাহলেই শিশু নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button