ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে সমানতালে। দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। দেশে এক বছরে এই রোগে আর কখনও এত মানুষের মৃত্যু ঘটেনি। দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর- এই চার মাসকে ডেঙ্গুর ভর মৌসুম ধরা হয়। কারণ, এ সময় বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে। আর এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই এই সময়টাকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরা হয়। কিন্তু এবার মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। অবশ্য বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গুর বিস্তার দেখে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ আশঙ্কাময় ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন এবং সবাইকে সতর্ক করে আসছিলেন। কিন্তু কোনো সতর্কতা কাজে লাগেনি। আজ পর্যন্ত ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ানক রূপ নিচ্ছে। ভবিষ্যতে এ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলছে। অথচ সংশ্লিষ্টরা সেদিকে নজর না দেওয়ায় এর ভাইরাস মারাত্মক হয়ে উঠেছে বলে জানা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজার ১৪, মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ১ হাজার ৬১৫। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কেবল হাসপাতালে আসা রোগীদের হিসাব রাখে। কিন্তু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পরও যেসব রোগী হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নেন, কিংবা চিকিৎসা নেওয়ার আগেই মারা যান, সেই হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, হাসপাতালের বাইরে অন্তত চার গুণ রোগী আছেন। তবে হাসপাতালের বাইরে থাকা রোগীদেরও শনাক্ত করে রোগের ধরন পরীক্ষা করা জরুরি। সেই সঙ্গে বাতাসে মশার ওষুধ না ছিটিয়ে মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে হবে। এর জন্য সমন্বিত ও সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। ডেঙ্গু রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও দপ্তরের সমন্বয়ে কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। চলতি বছর ৬৪ জেলাতেই ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে, বহু গ্রামের মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর অর্থ, সারা দেশে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা আছে। তাই একই সঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। মশানিধনে শুধু জনসচেনতনা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে শুধু বর্ষা মৌসুমে নয়, সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন পৌরসভায় সারা বছর মশা নিধনের কাজ করতে হবে ও পরিশেষে প্রয়োজন সমন্বিত কার্যক্রম।