শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন

টিপ টিপ বৃষ্টিতে শীতে কাপছে দেশ। চরম ভোগান্তিতে সারা দেশের ভাগ্যহত হতবিহ্বল অসহায় দরিদ্র মানুষ। বিশেষ করে শিশুদের কষ্টের শেষ নেই। উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের তেমন কোনো সমস্যা নেই। তারা মূলত শীতকে উদযাপন করে থাকে। কিন্তু নি¤œবিত্ত এবং সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য এই শীত নিয়ে আসে এক ভয়াবহ দুর্ভোগ। তারা প্রয়োজনীয় শীতের কাপড় না থাকার করণে শীতে প্রচন্ড রকমের কষ্ট করে। বিশেষ করে গৃহহীন মানুষ, পথশিশুদের কষ্টের কোনো শেষ থাকে না এই শীতকালে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য চেষ্টা করা। তাহলে হয়তো এই শীতার্ত মানুষের কষ্ট কিছুটা কমে আসবে। আমরা জানি, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ গ্রীষ্মকালে বা গরমের দিনে ফুটপাথ, রেলস্টেশন ও বস্তিতে থাকতে পারে। কিন্তু শীতকালে তাদের জন্য ফুটপাথ কিংবা রেলস্টেশনে থাকা খুবই কষ্টকর বা অসহনীয়। তা ছাড়া শীতে তাদের মাঝেমধ্যে না খেয়েও থাকতে হয়। শৈত্যপ্রবাহের রুষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে অসহায় ও হতদরিদ্রদের কষ্ট কেবল বেড়েই যায়। বৃদ্ধ, শিশু ও ফুটপাথের গরিব মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে মারাও যায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি আমরাও পারি শীতার্তদের জন্য সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে। শীতের সময় শহরাঞ্চলের মানুষের তুলনায় গ্রামের সাধারণ মানুষ বেশি অসহায় হয়ে পড়ে। তারা যেখানে দুবেলা দুমুঠো খাবার কিনতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যায়, সেখানে শীতের বস্ত্র কেনা অসম্ভব এক রকম। গ্রামের এসব মানুষের অনেকের পক্ষে আলাদাভাবে শীতের কাপড় কেনা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। যদিও প্রতিবছর শীতের সময় দেশের বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা এমনকি ব্যক্তিপর্যায়ে শীতার্ত মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। সরকারি পর্যায়েও গরিব মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে বলা বাহুল্য, এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এক্ষেত্রে সঠিক বণ্টনের অভাবের কথাও শোনা যায়, শোনা যায় অনিয়মের কথাও। এ বিষয়টি মাথায় রেখে এবার শীতবস্ত্র বিতরণে সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অতি জরুরি। সরকারকে শীতার্তদের বিষয়ে যথার্থ পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশপাশি সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সমাজে যারা বিত্তবান ব্যক্তি, তারা চাইলেই ছিন্নমূল মানুষদের এই শীতের সময় একটু সাহায্য করতে পারে। এছাড়া বিলাসিতাকে পাশ কাটিয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষাকে বিকশিত করতে পারে তরুণপ্রজন্মও। সমন্বিত একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজটি সুসম্পন্ন করতে পারলে দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে শীতের কষ্ট থেকে রক্ষা করা যাবে। দিনশেষ আমরা যেন ভুলে না যাই ‘মানুষ মানুষের জন্য’।